
প্রতিটি মানুষের স্বপ্ন থাকে নিজের একটি গাড়ি থাকবে। কিন্ত অর্থের অভাবে তার এই স্বপ্ন পূরন হয় না। তাই কার লোন নিয়ে স্বপ্নের গাড়ি কিনতে পারেন। আপনি যদি একটি গাড়ি কিনতে চান তাহলে কার লোন বা অটো লোন নিয়ে সহজেই একটি গাড়ির মালিক হতে পারবেন। তাহলে চলুন জেনে নিই একটি কার লোন বা হোম লোন নিতে হলে কি কি শর্ত পূরণ করতে হবে।
কার লোন নেওয়ার মূল শর্ত কি?
একটি কার লোন নেওয়ার জন্য অনেক শর্ত পালন করতে হয়। তার মধ্যে যে শর্তটি ঠিক না থাকলে কোন ব্যাংক তাকে লোন দিবে না তা হলো। সি আই বি রিপোর্ট ক্লিন হতে হবে।
১. সি আই বি রিপোর্ট কি:
সি আই বি রিপোর্ট ক্লিন না থাকলে কোন ব্যাংক একটি অটো লোন দেয় না। আমি যদি সহজ ভাষায় বোঝায় সি আই বি রিপোর্ট কি? এক কথায় এটাকে লোন ডিফোল্ডার বলা যেতে পারে। কোন ব্যাক্তির যেকোন লোন যদি ৩- ৪ মাস বা তার বেশি বকেয়া থাকে তাহলে সেই তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সি আই বি রিপোর্টে এসএমএ (SMA) হিসেবে যোগ হয়ে যায়। কারো সিআইবি রিপোর্ট এসএমএ থাকলে কোন ব্যাংক তাকে কার লোন দেয় না।
কার লোন নেওয়া জন্য অন্য যেসকল শর্ত গুলো পুরণ করতে হবে।
বর্তমানে কার লোন পাওয়া অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে। অটো লোন পাওয়ার জন্য মুলত দুই ধরনের শর্ত কাজ করে। একটি হলো উদ্যোক্তা বা ব্যবসায়ীদের জন্য এক ধরনের শর্ত থাকে। সার্ভিস হোল্ডার বা চাকুরী জীবীদের জন্য এক ধরনের শর্ত থাকে।
উদ্যোক্তা বা ব্যবসায়ীদের কার লোন শর্ত সমূহ
- মাসিক আয়: ৫০,০০০ থেকে ৭৫,০০০ টাকা হলে একজন উদ্যোক্তা বা ব্যবসায়ী সহজেই একটি কার লোনের পাবেন।
- ব্যবসার স্থায়িত্ব: একটি ব্যবসায় নূন্যতম ২ থেকে ৫ বছর হলে তিনি সহজেই একটি কার লোন পেতে পারেন।
- বয়স: ২৫ থেকে ৬৫ এর ভিতর থাকতে হবে।
সার্ভিসহোল্ডার বা চাকুরী জীবীদের কার লোন শর্ত সমূহ
- মাসিক আয়: ৩০,০০০ থেকে ৪০,০০০ টাকা হলে একজন চাকুরী জীবী বা সার্ভিস হোল্ডার সহজেই একটি কার লোনের পাবেন।
- ব্যবসার স্থায়িত্ব: ন্যূনতম ২ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে চাকরিজীবীদের কার লোন নিতে হলে।
- বয়স: ২৫ থেকে ৬৫ এর ভিতর থাকতে হবে।
কার লোন করতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
কার লোন করতে প্রয়োজনীয় যা যা লাগবে তা আপনাকে ব্যাংক থেকেই বলে দেবে। এখানে আপনার যে কাজটি করতে হবে তা হলো আপনার পছন্দ অনুযায়ী একটি গাড়ি চয়েস করতে হবে। তার পর ব্যাংক সেই অনুযায়ী আপনাকে একটি লোন স্টেটমেন্ট দিবে।
সাধারণত কার লোন নিতে হলে ব্যাংক আপনাকে গাড়িটির সম্পূর্ণ মূল্য পরিশোধ করবে না। ব্যাংক আপনাকে গাড়িটির দামের ৭০% – ৫০% টাকা দিয়ে থাকবে ব্যাংক অনুসারে। আর বাকি টাকা আপনাকে পরিশোধ করে গাড়িটি ক্রয় করতে হবে।
আরো পড়ুন: ১ লক্ষ টাকা লোন নিতে চান
কার লোন পেতে যে কাগজপত্র গুলো লাগবে
ক্রমিক নং | চাকুরিজীবীদের ডকুমেন্টস | ব্যবসায়ীদের ডকুমেন্টস |
০১ | জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) বা পাসপোর্ট | জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) বা পাসপোর্ট |
০২ | সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের ছবি (২-৩ কপি) | সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের ছবি (২-৩ কপি) |
০৩ | বর্তমান ঠিকানার প্রমাণ (বিদ্যুৎ বিল/গ্যাস বিল/টেলিফোন বিল বা বাড়ির ভাড়ার চুক্তিপত্র) | বর্তমান ঠিকানার প্রমাণ (বিদ্যুৎ বিল/গ্যাস বিল/টেলিফোন বিল বা বাড়ির ভাড়ার চুক্তিপত্র) |
০৪ | সর্বশেষ ৩ থেকে ৬ মাসের বেতন স্লিপ বা সেলারি সার্টিফিকেট | ট্রেড লাইসেন্স (সর্বশেষ নবায়ন করা) |
০৫ | কর্মসংস্থানের প্রমাণ (কোম্পানির আইডি কার্ড বা নিয়োগপত্র) | ক্রেডিট রিপোর্ট (CIB রিপোর্ট) – ব্যাংক সংগ্রহ করবে |
০৬ | ব্যাংক স্টেটমেন্ট (সর্বশেষ ৬ মাসের) | ট্যাক্স আইডি (TIN) এবং আয়কর রিটার্ন (সর্বশেষ ২-৩ বছরের) |
০৭ | আয়কর রিটার্ন (যদি থাকে) | কোম্পানি হলে মেমোরেন্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশন ও আর্টিকেল অব অ্যাসোসিয়েশন |
০৮ | প্রভিডেন্ট ফান্ড স্টেটমেন্ট (যদি থাকে) | ব্যাংক স্টেটমেন্ট (সর্বশেষ ৬-১২ মাসের) |
০৯ | ক্রেডিট রিপোর্ট (CIB রিপোর্ট) – ব্যাংক সংগ্রহ করবে | অডিটেড ফাইনান্সিয়াল স্টেটমেন্ট (যদি বড় ব্যবসা হয়) |
কার লোনের বাংলাদেশ কত পার্সেন্ট ইন্টারেস্ট বা সুদ দিতে হয়।
আপনি যদি একটি কার লোন দিতে চান তাহলে ব্যাংকে কত পার্সেন্ট ইন্টরেস্ট দিতে হবে তা অবশ্যই ভালো করে জেনে নিবেন। বর্তমানে বাংলাদেশে বিভিন্ন ব্যাংক কার লোন ইন্টারেস্ট বিভিন্ন রকম নিয়ে থাকে। তবে ৯% থেকে ১৪% এর মধ্যে পেয়ে যাবেন।
বাংলাদেশে কার লোন বা অটো লোনের জন্য কোন কোন ব্যাংক ভালো
বাংলাদেশে অনেক ব্যাংক রয়েছে তারা সবাই লোন দেয়। কিন্তু কার লোন বা অটো লোনের জন্য সব ব্যাংক ভালো সার্ভিস দেয় না। বাংলাদেশে কার লোনের জন্য যে সকল ব্যাংক গুলো ভালো সার্ভিস দিয়ে তাকে তাদের তালিকা দেওয়া হলো।
১. পূবালী ব্যাংক
২. ডাচ্ বাংলা ব্যাংক
৩. ঢাকা ব্যাংক
৪. ইস্টার্ন ব্যাংক
৫. স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক
৬. ব্র্যাক ব্যাংক
৭. সিটি ব্যাংক
৮. মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক (এমটিবি)
কিভাবে কার লোনের জন্য মাসিক বা বার্ষিক কিস্তি হিসাব করবো?
আপনি যে পরিমান লোন নিবেন সেই অর্থের কত পার্সেন্ট ইন্টারেস্ট দিতে হবে এবং কত বছর সময়ের মধ্যে পরিশোধ করা লাগবে তার উপরে আপনার মাসিক বা বার্ষিক কিস্তি আসবে।
কার লোন কিস্তি হিসাব করার জন্য আপনাকে গুগলে গিয়ে সার্চ করতে হবে লোন ক্যালকুলেটর লিখে।

প্রথমে আপনাকে গুগলে যেতে হবে। এবং সেখানে গিয়ে সার্চ করতে হবে লোন ক্যালকুলেটর লিখে। এখানে অনেক গুলো ওয়েবসাইট আসবে আপনি যেকোন একটি দিয়েই করতে পারবেন। আমি ডাচ বাংলা ব্যাংকের ওয়েবসাইটির মাধ্যমে দেখালাম।

লিঙ্কে ক্লিক করুন। তারপর প্রবেশ করুন তাদের ওয়েসবাটের ভিতরে।

ওয়েবাইটের ভিতরে আপনি প্রথমে এমন একটি ইন্টারফেস দেখতে পাবেন। আপনি দেখতে পাচ্ছেন লোন ক্যালকুলেটর লেখা রয়েছে। এবং তার নিচে লোন এমাউন্ড লেখা সামনে খালি ঘর। এভাবে ইন্টারেস্ট রেট, লোন পিরিয়ড (ইয়ারস) রয়েছে।
- তো আপনাকে এই খালি ঘর গুলো পুরন করতে হবে। লোন এমাউন্ড এর ঘরে কত টাকা লোন সেই এমাইন্ট লেখুন।
- তারপর ইন্টারেস্ট এর ঘরে কত পার্সেন্ট সুদ দেওয়া লাগবে ব্যাংকে তা সবাতে হবে।
- লোন পিরিয়ড এর ঘরে কত বছরের জন্য আপনি লোনটি নিচ্ছেন তা লিখুন। এবং নিচে ক্যালকুলেট এ ক্লিক করুন।

ক্লিক করার পরে নিচে দেখুন দেখতে পারছেন আপনার মাসিক ইন্টারেস্ট, টোটাল পেমেন্ট করা লাগবে কত টাকা, এবং মোট কত টাকা সুদ দেওয়া লাগবে ৬ বছরে তা দেখাচ্ছে। আপনি ও আপনার সকল তথ্য দিয়ে সহজেই বের করতে পারবেন কার লোন, হোম লোন, ব্যবসা লোন ইত্যাদির হিসাব।
কিওয়ার্ড: সোনালী ব্যাংক কার লোন, কার লোন ইন্টারেস্ট রেট বাংলাদেশ, ইসলামী ব্যাংক গাড়ি লোন, সিটি ব্যাংক কার লোন, গাড়ি কিনতে চাই। গাড়ি কেনার জন্য ব্যাংক লোন।