পারিবারিক বাজেট তৈরির ছক: যা ধনী হতে সাহায্য করবে

Share This Post
পারিবারিক বাজেট তৈরির ছক

পারিবারিক বাজেট তৈরির ছক কি? কেন পারিবারিব বাজেট করতে হবে? পার্সোনাল বাজেট তৈরি করলে কিভাবে একজন সঞ্চয়ী হয়ে উঠা যাবে তার সকল বিষয় জানতে পারবেন এই ব্লগপোস্ট এর মাধ্যমে। তাহলে চলুন দেখে নেওয়া যাক।

পারিবারিক বাজেট কি?

আমরা যখন আমাদের বাজেট অর্থাৎ পার্সোনাল বাজেট বা পারিবারিক বাজেট এর কথা চিন্তা করি তখন আমাদের যে বিষয়টি আসে তাহলো আমাদের আয় কত, ব্যয় কত এবং সঞ্চয়ের পরিমান কত? আমরা পারিবারিক বাজেট তৈরি করে এটা নির্নয় করতে পারি আমাদের আয়-ব্যয় এবং সঞ্চয় কত হয় প্রতি মাসে। পারিবারিক বাজেট তৈরির ছক তার সকল তথ্য সুশৃঙ্খলভাবে রাখতে সাহায্য করে। 

পারিবারিক বাজেট তৈরির ছক না করলে যে অসুবিধা হয়

আমরা যদি পারিবারিক বাজেট তৈরির ছক না করি তাহলে আয়-ব্যয় ও সঞ্চয়ের সঠিক পরিকল্পনা হয় না। ফলে আয় থেকে ব্যয় বেশি হয়ে যায়। মাস শেষে কোন সঞ্চয় থাকে না। কোন কাজ করতে গেলে ঋণ নিয়ে করতে হয়। এক সময় দেখা যায় ঋণের ফলে সংসারে প্রতিনিয়ত ঝগড়া বিভাদ ঘটে থাকে। 

পারিবারিক বাজেট তৈরির ছক এর গুরুত্ব

  • ব্যয় নিয়ন্ত্রন: পারিবারিক বাজেট তৈরির ছক না করলে আমাদের কোন খাতে কতটুকু ব্যয় করতে হবে তা বুঝতে পারি না। তাই ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করতে হলে অবশ্যই পারিবারিক বাজেট করতে হবে।
  • ইমার্জেন্সি ফান্ড গঠন: পারিবারিক বাজেট তৈরির ছক না করলে আমাদের ইমার্জেন্সি ফান্ড রাখতে হবে তার খেয়াল থাকে না। যা ফলে আমরা ইমার্জেন্সি মুহুর্তে টাকার অভাবে পড়ি। পারিবারিক বাজেট থাকলে আমাদের ইমার্জেন্সি ফান্ড গঠন করা হয়। 
  • লোন পরিশোধ: পারিবারিক বাজেট থাকলে আমাদের লোন গুলো পরিশোধ হয় তাড়াতাড়ি। কারণ আমরা যখন বাজেট এর দিকে তাকাই কখন আমাদের লোন আছে কত তা চোখে পড়ে। ফলে লোন পরিশোধ করার প্রবণতা তৈরি হয়। 
  • সঞ্চয় বৃদ্ধি: পারিবারিক বাজেটের সব থেকে বড় গুণ হলো আামাদের সঞ্চয় বৃদ্ধি পায়। বাজেট অনুযায়ী যখন সকল কাজ গুলো সম্পন্ন করি তখন আমাদের সঞ্চয় বৃদ্ধি হতে থাকে। তাই পারিবারিক বাজেট তৈরির ছক করতে হবে। 
  • মানসিক চাপ হ্রস: যখন বেহিসাবি ভাবে আমরা আয়-ব্যয় করি তখন সঞ্চয় বৃদ্ধি পায় না। ঋণী হয়ে যেতে হয়। সংসারে ঝামেলা লেগে থাকে যার ফলে মানসিক চাপ হয়। কিন্তু আপনি পারিবারিক বাজেট তৈরি করলে এই সমস্যা গুলো হয় না। ফলে মানসিক চাপ হ্রাস পায়। 

নমুনা বাজেট:

আয়ের উৎসবাজেটপ্রকৃত
বেতন৪০,০০০৪০,০০০
বাসা ভাড়া
অন্যান্য১০,০০০১০,০০০
মোট আয়৫০,০০০৫০,০০০
ব্যয়ের উৎসবাজেটপ্রকৃত
মর্টগেজ মেপেন্ট (ঋণ পরিশোধ)১৫,০০০১৫,০০০
মুদিখানার জিনিস১১,০০০১১,০০০
ইউটিলিটি১৫০০১৫০০
পরিবহণ খরচ২৫০০২৬০০
স্বাস্থ্য সেবা২০০০২৪০০
শিক্ষা ব্যয়৫,০০০৬,০০০
পোশাক২০০০২৫০০
বাইরে খাওয়া২০০০২৫০০
বিনোদন২০০০২৫০০
মোট ব্যয়৪৩,০০০৪৬,০০০
সঞ্চয় হওয়ার কথা৭০০০৪০০০

তাহলে আমরা এই নমুনা পারিবারিক বাজেট তৈরির ছক থেকে কি বুঝতে পারলাম। দেখলাম তার বেতন এবং অন্যান্য আয় মিলে মোট আয় হয় ৫০ হাজার টাকা। সেই অনুযায়ী একটি বাজেট তৈরি করেছেন। তিনি বাজেটে তার মোট ব্যয় রেখেছেন ৪৩ হাজার টাকা। কিন্তু প্রকৃত ভাবে তার ব্যয় হয়েছে ৪৬ হাজার টাকা। 

ফলে তিনি দেখতে পেলেন তার কোন কোন খাতে বেশি ব্যয় হয়েছে। তার পরের মাসে তিনি সেই সকল খাত গুলোতে ব্যয় কমিয়ে সঞ্চয় বাড়াতে পারবেন। 

তাহলে আপনি যেভাবে একটি পারিবারিক বাজেট তৈরির ছক বানাবেন তা দেওয়া হলো। 

আপনি প্রথমে আপনার আয়ের সকল উৎস গুলো একটি ছকে লিখবেন। 

আয়ের উৎসবাজেটপ্রকৃত
বেতন/ নিয়মিত আয়ের উৎসের নাম
বাসা ভাড়া
অন্যান্য 
মোট আয়

আপনি প্রথমে আপনার ব্যয়ের সকল উৎস গুলো একটি ছকে লিখবেন। 

ব্যয়ের উৎসবাজেটপ্রকৃত
মর্টগেজ মেপেন্ট (ঋণ পরিশোধ)
মুদিখানার জিনিস
ইউটিলিটি
পরিবহণ খরচ
স্বাস্থ্য সেবা
শিক্ষা ব্যয়
পোশাক
বাইরে খাওয়া
বিনোদন
মোট ব্যয়
সঞ্চয় হওয়ার কথা

পারিবারিক বাজেট তৈরির ছক গাইডলাইন

জীবনযাত্রার ব্যয়।

আপনার আয় থেকে প্রতি মাসে যে ব্যয় গুলো করবেন তার মধ্যে প্রধানত ব্যয়ের খাত হলো জীবনযাত্রার ব্যয়। এই ব্যয়ের মধ্যে রয়েছে

  • বাসাভাড়া
  • ঋণ পরিশোধ(মর্টগেজ লোন)
  • মুদিখানার জিনিস
  • ইউটিলিটি
  • পরিবহণ খরচ
  • শিক্ষা ব্যয়
  • স্বাস্থ্য ব্যয়
  • পোশাক

আপনার মাসিক যে আয় তার থেকে ৫০% ব্যয় করবেন এই খাত গুলোতে। ধরা যাক মাসে আয় ৪০, হাজার টাকা। তাহলে এই খাতে খরচ করবেন ২০ হাজার টাকা।

আরো পড়ুন: ইউনিক ৫০টি প্যাসিভ ইনকাম আইডিয়া

চাহিদা পুরনের খরচ

প্রতিটি মানুষের চাহিদা রয়েছে। তাই তার চাহিদা গুলো পুরণ করতে হবে। তাই আপনি আপনার মাসিক বেতন থেকে চাহিদা গুলো পুরণ করবেন। চাহিদার ভিতর রয়েছে:

  • বাইরে খাওয়া
  • ঘুরতে যাওয়া
  • কোন অনলাইন সাবক্রিপশন কেনা হতে পারে

আপনার মাসিক যে আয় তার থেকে ৩০% ব্যয় করবেন এই খাত গুলোতে। ধরা যাক মাসে আয় ৪০, হাজার টাকা। তাহলে এই খাতে খরচ করবেন ১২ হাজার টাকা।

নিয়মিত সঞ্চয়

আপনি প্রতিমাসে নিয়ম অনুযায়ী সঞ্চয় করবেন ভবিষ্যতের জন্য। যে কারণ গুলোর জন্য সঞ্চয় করবেন।

  • ইমার্জেন্সি ফান্ড গঠন
  • লোন পরিশোধ
  • বিনিয়োগ

আপনার মাসিক যে আয় তার থেকে ১৫% ব্যয় করবেন এই খাত গুলোতে। ধরা যাক মাসে আয় ৪০, হাজার টাকা। তাহলে এই খাতে খরচ করবেন ৬ হাজার টাকা। এই ৬ হাজার টাকার থেকে আপনি ইমার্জেন্সি ফান্ডের জন্য ৫০০/- রাখতে পারেন। অন্যান্য লোনের পরিশোধের জন্য ১৫০০/- ব্যয় করতে পারেন। এবং বাকি ৪০০০/- টাকা আপনি বিনিয়োগ করবেন।

রিটায়ারমেন্টের জন্য সঞ্চয়

আপনি এই খাতে ৫% সঞ্চয় করবেন রিটায়ারমেন্টের জন্য। তাহলে আপনি রিটায়ারমেন্টের পরে নিশ্চিন্তে থাকতে পারবেন। আর্থিক সংকটে থাকতে হবে না।

পরিশেষে: প্রতিটি মানুষের আয় অনুযায়ী ব্যয় করার প্রয়োজন। তাহলে তিনি কখনও আর্থিক সংকটে পড়বেন না। আমরা সবাই নিজেদের পারিবারিক বাজেট তৈরির ছক করে নিজেদের জিবনযাপন এগিয়ে যায়। ধন্যবাদ সবাইকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *