ব্লু কাট চশমা চোখের জন্য কতটা উপকারী এবং ক্ষতিকারী?

Share This Post
ব্লু কাট চশমা চোখের জন্য কতটা উপকারী এবং ক্ষতিকারী?

ব্লু কাট চশমা চোখের জন্য কতটা উপকারী এবং ক্ষতিকারী?

আজকে আপনারা ব্লু কাট চশমা চোখের জন্য কতটা উপকারী এবং ক্ষতিকারী তার বিস্তারিত জানাবো। ব্লু কাট বা ব্লু লাইট ব্লক চশমা ডিজিটাল ডিভাইসের থেকে আমাদের কতটুকু সুরক্ষা প্রদান করে। ব্লু কাট চশমা আমাদের ব্যবহার করা উচিত কি না? ব্লু কাট চশমার দাম কত? এই সকল প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য সবাই আগ্রহী। তাহলে চলুন ব্লু-কাট চশমা চোখের জন্য কতটা উপকারি এবং কতটা ক্ষতিকারী তার পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা করি।

ব্লু লাইট কি?

আমরা আমাদের চারপাশে যে আলো দেখতে পাই, বিশেষ করে সূর্যের আলো। সেই আলো সাতটি রংয়ের সংমিশ্রণে তৈরি। এই আলোর সংমিশ্রণকে ইংরেজিতে Visibal Spectram বাংলায় দৃশ্যমান বর্ণচ্ছটা বা বর্ণালি। অর্থাৎ দেখতে পারা যায় এই আলো। এই বর্ণালির সাতটি রং হচ্ছে: বেগুনি, বেগুনি নীল, নীল, সবুজ, হলুদ, কমলা এবং লাল।

ব্লু লাইট হলো একটি দৃশ্যমান আলো যা উচ্চ-শক্তিসম্পন্ন শর্ট-ওয়েভলেংথে থাকে। এটি ৩৮০ থেকে ৪৯২ ন্যানোমিটারের মধ্যে রয়েছে এবং দৃশ্যমান আলোর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী। এটি সূর্যের আলোতে, LED লাইট, কম্পিউটার স্ক্রিন, স্মার্টফোন, এবং টিভির মতো ডিজিটাল ডিভাইসগুলিতে পাওয়া যায়।

ব্লু কাট লাইট চশমা কি?

ব্লু কাট চশমা মূলত এমনভাবে ডিজাইন করা যা ডিজিটাল ডিভাইস থেকে নির্গত হওয়া উচ্চ শক্তির ব্লু লাইট বা নীল আলো ফিল্টার করে। এই চশমাগুলি সাধারণত এমন লেন্স দিয়ে তৈরি হয় যা ব্লু লাইটের তরঙ্গদৈর্ঘ্যকে ফিল্টার করে এবং চোখের ক্লান্তি, শুষ্কতা এবং অন্যান্য সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।

ব্লু লাইট / নীল আলো মানুষের জন্য কতটা ক্ষতিকর?

  1. চোখের চাপ (Digital Eye Strain): দীর্ঘ সময় নীল আলোর দিকে তাকিয়ে থাকলে চোখের উপর অনে চাপ পরে। যার ফলে চোখ ব্যাখা করে, অসস্থি লাগে।  
  2. রেটিনার ক্ষতি: ব্লু লাইটের উচ্চ-শক্তির ফোটোনিক তেজস্ক্রিয়তা দীর্ঘমেয়াদে চোখের রেটিনার ক্ষতি করতে পারে। এই উচ্চ নীল আলোর প্রভাবে ম্যাকুলার ডিজেনারেশন চোখের রোগ আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাছাড়া কেন্দ্রিয় দৃষ্টি শক্তির ক্ষমতা কমে যেতে থাকে।  
  3. ঘুমের সমস্যা: মেলাটোনিন আমাদের ঘুমানো জন্য সহায়তা করে। কিন্তু নীল আলোর সংস্পর্শে থাকলে মেলাটোনিন উৎপাদন কম হয়। যা ঘুম চক্রকে প্রভাবিত করে। তাই নীল আলোর সংস্পর্শে দীর্ঘদিন থাকলে মানুষ নিদ্রাহিতনায় ভুগে থাকেন।
  4. ড্রাই আই সিনড্রোম: ব্লু লাইটের প্রভাবে চোখের পৃষ্ঠের আদ্রতা কমে যায়। তাছাড়া একনাগাড়ে দির্ঘক্ষন তাকিয়ে থাকলে মানুষ চোখের পলক কম ফেলে। যা চোখ শুষ্ক হওয়ার আরেকটা বড় কারণ। এই সমস্যাকেই ড্রাই আই সিনড্রোম বলে। এই সমস্যা হলে চোখে জ্বালা, শুষ্কতা এবং অস্বস্তি হয়।
  5. মাথাব্যথা: মাথার সবচেয়ে কাছের একটি অংশ হচ্ছে চোখ। ব্লু লাইট বা নীল আলো চোখের পেশীতে চাপ প্রয়োগ করে। যার ফলে মানুষ মাথা ব্যথার মতো সম্যায় ভুগে থাকেন। যারা দির্ঘক্ষন ডিজিটাল স্কিনের দিকে তাকিয়ে তাকে তাদের এই সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে। 
  6. মানসিক স্বাস্থ্য: দির্ঘদিন শিশুরা যদি এই নিল আলোর 
  7. মেজাজের পরিবর্তন
  8. দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য ঝুঁকি

ব্লু লাইট চশমা আমাদের কতটা সুরক্ষিত রাখে?

ব্লুকাট চশমা তৈরি করা হয়েছে এমন ভাবে যা ক্ষতিকর ব্লু লাইট বা নীল আলো ফিল্টার করে ফেলে। যদি একটি উদাহরণ দিয়ে বোঝাই তাহলে আপনারা সহজেই বুঝতে পারবেন। ঘোলা পানি বা দুষিত পানি ও ফিল্টার কৃত করার পর তা পানের যোগ্য হয়ে যায়। তেমনিই কাজ করে থাকে ব্লু কাট চশমা। তাই বলা যায় আমাদের চোখ সুরক্ষার জন্য আমরা ব্লু কাট চশমা ব্যবহার করতে পারি। 

ডিজিটাল ডিভাইসের ব্লু লাইট মানুষের কতটা ক্ষতি করে।

আপনারা ইতিমধ্যেই ব্ললু লাইট / নীল আলোর ক্ষতিকর দিক গুলো জেনে গিয়েছেন। সবার মনে এখন একটাই প্রশ্ন আসছে ব্লু লাইটের এতটা খারাপ দিক হয়ে আমাদের তো চোখের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। কিন্তু একটা কথা এখানে স্পষ্টভাবে বলতে চাই। কথাটি হলো ব্লু লাইট আমাদের ক্ষতি করে সত্যিই। তবে আমরা যেসব উৎস থেকে ব্লু লাইট পেয়ে থাকি যেমন: 

  • সূর্য: নীল আলোর সবচেয়ে বড় উৎস হলো সূর্য। 
  • মোবাইল: মোবাইলের স্কিন থেকে ও ব্লু লাইট বেরিয়ে থাকে। 
  • কম্পিউটার: কম্পিউটারের মনিটর থেকেও ব্লু লাইট পেয়ে থাকি আমরা। যা আমাদের চোখে লাগে। 
  • এলইডি লাইট: ঘরে বা দোকানে আমরা যে সকল এলইডি লাইট গুলো ব্যবহার করে থাকি তার থেকেও ব্লু লাইট ছড়ায়। 

মোট কথা সকল প্রকার ডিজিটাল ডিভাইস থেকেই ব্লু লাইল প্রতিফলিত হয়ে থাকে। 

এই সকল উৎস থেকে যে নীল আলো প্রতিফলিত হয়ে থাকে তা খুবই সামান্য। যা একজন মানুষের জন্য বেশি ক্ষতিকার নয়। তবে একজন মানুষ যদি দিনে বেশির ভাগ সময়ই এই নীল আলোর দিকে তাকিয়ে কাজ করে সেক্ষেত্রে তার জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। নিয়ম মেনে বা দিনে ২-৫ ঘন্টার মতো এই ডিভাইস গুলো ব্যবহার করলে তার কোন ধরনের সমস্যা হওয়ার কথা নয়। যে ব্যক্তি প্রতিদিন ৮ ঘন্টার ও বেশি সময় ধরে একটানা ডিজিটাল ডিভাইসগুলো ব্যবহার করে বিশেষ করে মোবাইল এবং কম্পিউটার তারা কিছুটা ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। 

আরো পড়ুন: ২০২৫ সালে সফল ইউটিউবার হওয়ার উপায়

ব্লু কাট চশমার ভুল ধারণাগুলি।

ব্লু কাট চশমার মার্কেটিং এমন ভাবে করা হয়েছে যে মানুষের মনে ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছে। অনেকে তাদের ভিডিও বা লেখা পরে আতঙ্কের মধ্যে ও পরেছে। কিন্তু আসলে এটা সম্পূর্ণ ভূল। প্রতিটি মানুষের জন্য যে ব্লু কাট চশমা প্রয়োজনত হবে এমনটা নয়। মানুষের ডিজিটাল ডিভাইস গুলো ব্যবহারের উপরে নির্ভর করবে তাদের জন্য আসলেই ব্লু কাট চশমা প্রয়োজন হবে কি না। 

সবার ব্লু কাট চশমা কেনার কোন প্রয়োজন নেই। যে সকল ইউজার দিনে ১-২ ঘন্টার জন্য মোবাইল দিয়ে ভিডিও দেখে থাকেন তার জন্য এই ব্লু কাট চশমার কোন প্রয়োজন নাই। 

শুধু মাত্র এমন সব ইউজারদেরই ব্ল কাট চশমা কেনা প্রয়োজন যারা ১০-১২ ঘন্টা কম্পিউটার স্কিনের সামনে বসে কাজ করা লাগে। 

কাদের জন্য একটি ব্লু কাট চশমা প্রয়োজন?

  1. একজন ফুল টাইম ভিডিও এডিটর। 
  2. ফুল টাইম গ্রাফিক্স ডিজাইনারের।
  3. গেমার

আপনি যে ভাবে মোবাইল বা কম্পিউটার ব্যবহার করলে আপনার জন্য কোন ব্লু কাট চশমার প্রয়োজন হবে না।

আপনি যদি একটু নিয়ম মেনে এই ডিভাইস গুলো দিনভরে ব্যবহার করেন তাহলে আপনার জন্য কোন ধরনের চশমা প্রয়োজন হবে না। 

  • যেমন আপনি ২০-২০-২০ নিয়মটি ফলো করতে পারেন। অর্থাৎ প্রতি ২০ মিনিট পরে ২০ ফিট দুরের কোন বস্তু দিকে ২০ সেকেন্ড তাকাতে হবে।
  • চোখের পলক স্বাভাবিক সময়ের মতোই ফেলবেন। মানে মানুষ যখন মোবাইল বা কম্পিউটার ব্যবহার করে তখন তিনি প্রয়োজনের তুলনায় কম পলক ফেলে যার কারণে চোখ শুষ্ক হয়ে যায়। 
  • মোবাইল কমপক্ষে ১৮ ইনসি দুরে রেখে এবং কম্পিউটার মনিটার কমপক্ষে ২৫ ইনসি দুরে রেখে ব্যবহার করবেন।

চোখ ভালো রাখার কিছু টিপস।

  1. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন: বিশ্রামের সবথেকে ভালো উপায় হলো ঘুম। আপনি প্রতিদিন ৭-৮ ঘন্টা ঘুম নিশ্চিত করুন। 
  2. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: চোখ ভালো রাখতে হলে স্বাস্থ্যকর খাবারের জুড়ি জুড়ি নেই। ভিটামিন এ জাতীয় খাবার বেশি খেতে হবে। ভিটামিন এ চোখের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার সমূহ চোখের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। তাই আপনাকে চোখ সুরক্ষার জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে। 
  3. পর্যাপ্ত পানি: চোখকে হাইড্রেটেড রাখতে এবং শুষ্কতা রোধ করতে প্রতিদিন পর্যান্ত পানি পান করতে হবে এবং পরিষ্কার পানি দিয়ে ৪-৫ বার চোখ ধুতে হবে। 
  4. নিয়মিত চোখ পরীক্ষা: বছরে একবার চোখ পরীক্ষা করান, বিশেষত যদি আপনি চশমা বা কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করেন।
  5. ব্লু লাইট থেকে সুরক্ষা: ব্লু লাইট থেকে সুরক্ষা থাকার জন্য নিয়ম মেনে ডিজিটাল ডিভাইস গুলো ব্যবহার করুন।
  6. স্ক্রিনের দূরত্ব ঠিক রাখুন: স্ক্রিন থেকে অন্তত ২০-২৪ ইঞ্চি দূরে বসুন। 
  7. পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা: পড়া লেখা বা কাজ করার জন্য সরাসরি চোখের উপর আলো না ব্যবহার করে আশে পাশের থেকে আলো ব্যবহার করুন। 
  8. চোখের ব্যায়াম: নিয়মিত চোখের ব্যয়াম করুন। শরীর সুস্থ্য রাখার জন্য যেমন শারীরিক ব্যয়াম করার প্রয়োজন হয়। মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য যেমন ব্রেনের ব্যায়াম করার প্রয়োজন হয় তেমনি চোখ স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য চোখের ব্যায়াম করতে হবে। 
  9. সূর্যের আলো থেকে সুরক্ষা: বাইরে বের হলে UV রশ্মি প্রতিরোধী সানগ্লাস ব্যবহার করুন। সূর্যের UV রশ্মি চোখের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে।
  10. ধূমপান থেকে বিরত থাকুন: ধূমপান চোখের ম্যাকুলার ডিজেনারেশন এবং ছানি পড়ার ঝুঁকি বাড়ায়। তাই ধূমপান এড়িয়ে চলুন।

ব্লুকাট চশমা এবং সাধারণ চশমার মধ্যে পার্থক্য।

বৈশিষ্ট্যব্লু-কাট চশমাসাধারণ চশমা
মূল কাজব্লু লাইট ফিল্টার করেব্লু লাইট ফিল্টার করে না
দৃষ্টি শক্তিদৃষ্টি শক্তির কোন উন্নতি হয় নাদৃষ্টি শক্তি উন্নত করে 
ব্লু লাইট সুরক্ষাহ্যাঁনা
চোখের ক্লান্তি কমানোচোখের ক্লান্তি কমায়চোখের ক্লান্তি কমায় না
ডিজিটাল স্ক্রিনে সুবিধাডিজিটাল স্ক্রিন ব্যবহারকারীদের জন্য আদর্শদৃষ্টি শক্তি উন্নত করতে কাজ করে থাকে। 
রাতের বেলা সুবিধানীল আলো ফিল্টার করার ফলে ঘুম চক্রের কোন বাধা আসে না। ভালো ঘুম হয়। ঘুমের সমস্যা সমাধান করে না। 
অ্যান্টি-রিফ্লেকটিভ লেন্সঅ্যান্টি-রিফ্লেকটিভ থাকেথাকতে পারে বা না-ও থাকতে পারে

আমাদের ফেইসবুক পেইজ: তোয়ান

আরো পরুন: সেরা ২০টি বাংলা স্টাইলিশ ফন্ট কালেকশন গ্রাফিক্স ডিজাইনের জন্য

বেস্ট টেক্সট টু ইমেজ জেনারেটর এআই | সেরা ১০টি AI দিয়ে ছবি তৈরি করার ওয়েবসাইট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *