১৩টি উপায়ে নিজেকে প্রথমে রাখুন – নিজের প্রতি ভালোবাসা শুরু করুন আজই!

Share This Post

১৩টি উপায়ে নিজেকে প্রথমে রাখুন: আমরা অনেক সময় অন্যের জন্য এতটা ভাবি, নিজেকেই ভুলে যাই। কিন্তু একটা কথা মনে রাখবেন—”ফাঁকা গ্লাস থেকে পানি ঢালা যায় না!” আপনি যদি নিজেকে ভালো না রাখেন, তাহলে অন্যদের ভালো রাখার শক্তি কোথা থেকে পাবেন? তাই এখনই সময় এসেছে নিজেকে গুরুত্ব দেওয়ার। নিজের প্রতি ভালোবাসা মানে স্বার্থপর হওয়া নয়, বরঞ্চ এটা আপনার আত্মসচেতনতা ও সুস্থ জীবনের পথে একটি শক্তিশালী একটি পদক্ষেপ।

১৩টি উপায়ে নিজেকে প্রথমে রাখুন

চলুন জেনে নেওয়া যাক এমন ১৩টি কার্যকর উপায়, যা আপনাকে নিজেকে ভালোবাসতে এবং নিজের প্রতি যত্ন নিতে সাহায্য করবে।

১. ব্যক্তিগত সীমানা নির্ধারণ করুন

মাঝে মাঝে ‘না’ বলতে শেখাটা খুব জরুরি। আপনি যদি সতর্ক না হন, তবে অন্যরা আপনার কাছ থেকে খুব বেশি আশা করবে না, যা আপনাকে ক্লান্ত ও অবসাদগ্রস্ত করে তুলবে। এটি এড়াতে আপনার বন্ধু, পরিবার এবং সহকর্মীদের সাথে একটি ভালো সীমানা তৈরি করুন। যদি কেউ আপনার সেই সীমানা লঙ্ঘন করে, তবে তাকে বুঝিয়ে বলুন যে তার কাজটি ঠিক হয়নি।

  • আপনি অফিসের লোকদের বলতে পারেন যে কাজের সময়ের পরে আপনাকে পাওয়া যাবে না।
  • আপনি বন্ধুদের বলতে পারেন যে রাত ১০টার পর যেন তারা ফোন বা মেসেজ না করে, কারণ তখন আপনার বিশ্রামের নেওয়ার সময়।
  • আপনি আপনার সঙ্গীকে বাড়ির কিছু কাজ নিজে থেকে করে নিতে অনুরোধ করতে পারেন।

২. প্রয়োজনে সাহায্য চান

আপনি একা সবকিছু করতে পারবেন না। তাই যখন আপনার সাহায্যের প্রয়োজন হবে, তখন আপনার সাথের ব্যক্তির কাছ থেকে সাহায্য চাইতে দ্বিধা করবেন না। কারণ সময়ে সময়ে প্রত্যেকেরই সাহায্যের প্রয়োজন হয়। যখন আপনার কিছু দরকার, তখন সরাসরি বলুন আপনার কী প্রয়োজন এবং কীভাবে অন্যরা আপনাকে সাহায্য করতে পারবে।

  • “এই সপ্তাহে আমি কাজে ডুবে আছি। তুমি কি দয়া করে কাপড়গুলো ধুয়ে দাও?”
  • “আজ কাজের পর আমার একটি অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে। তুমি কি বাচ্চাদের স্কুল থেকে নিয়ে আসো?”
  • “আমার কাজের চাপ বেশি, এই প্রজেক্টটা কি অন্য কাউকে দেওয়া যায়?”

মুখে বলুন, কারণ মানুষ তখন বেশি সাড়া দেয়।

৩. বিশ্রামের জন্য সময় রাখুন

একটা কাজ না করলেও চলবে, কিন্তু আপনি যদি ক্লান্ত হয়ে যান তাহলে কিছুই করতে পারবেন না। তাই সপ্তাহে অন্তত একদিন বা প্রতিদিন কিছুটা সময় শুধুই আপনার শরীর ও মনের বিশ্রামের জন্য বরাদ্দ রাখুন।

  • একটি আরামদায়ক কম্বলের নিচে বাড়িতে একটি সন্ধ্যা কাটান।
  • শুক্রবার সকালে কফি এবং বই নিয়ে সময় কাটান।
  • ক্লান্ত লাগলে ২০ মিনিটের জন্য একটি ছোট্ট ঘুম দিন।

৪. মানসিক চাপ কমান

প্রতিদিন মানসিক চাপ অল্প অল্প করে কমানোর চেষ্টা করতে হবে, যাতে তা জমে না যায়। এমন কিছু উপায় বেছে নিন যা আপনি সহজেই আপনার দৈনন্দিন জীবনে যোগ করতে পারেন। আপনার পঞ্চইন্দ্রিয়কে কাজে লাগানোর চেষ্টা করতে হবে, কারণ এটি আপনাকে সহজে আরাম পেতে সাহায্য করবে।

  • গরম হার্বাল চা উপভোগ করুন।
  • সুগন্ধি লোশন ব্যবহার করুন।
  • একটি মোমবাতি জ্বালিয়ে শান্ত সঙ্গীত শুনুন।
  • বাইরে কিছুক্ষণ হেঁটে আসুন।
  • শুক্রবারে সকালে কফি খেতে খেতে বই পড়ুন

৫. প্রতিদিন ১৫ মিনিট মজার জন্য রাখুন

আপনার পছন্দের কিছু করার জন্য প্রতিদিন কিছুটা সময় আপনার অধিকার। প্রতিদিন কমপক্ষে ১৫ মিনিটের একটি ব্লক তৈরি করুন যা আপনি নিজের আনন্দের জন্য ব্যবহার করতে পারেন। এই সময়ে আপনি আরাম করতে পারেন, আপনার প্রিয় শো দেখতে পারেন, বই পড়তে পারেন বা সৃজনশীল কিছু করতে পারেন।

  • কোনো সৃজনশীল কাজ করুন।
  • একটি পাজল মেলান।
  • বাইরে বসে আপনার পছন্দের কোনো পানীয় উপভোগ করুন।
  • প্রিয় সিরিজ দেখা
  • ছাদে বসে চা খাওয়া

আরো পড়ুন: জন্মদিনের গিফট আইডিয়া: সেরা ১০টি ইউনিক ও মেমোরেবল উপহার

৬. একটি শখ গড়ে তুলুন

আপনার পুরোনো কোনো শখকে আবার জাগিয়ে তুলুন অথবা নতুন কোনো শখ তৈরি করুন যা আপনাকে অনেক বেশি আনন্দ দিয়ে থাকে। সপ্তাহে অন্তত একবার আপনার শখের জন্য সময় দিন, এমনকি যদি তা কয়েক মিনিটের জন্য হলেও।

  • ছবি আঁকা 
  • বাগান করা
  • গেমিং
  • গিটার বাজানো
  • বা সেলাই করা।

৭. কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন

আপনার জীবনে যা কিছু ভালো আছে তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। যখন আপনি প্রাচুর্যের মানসিকতা নিয়ে জীবনযাপন করবেন, তখন আপনি আরও সুখী এবং পরিপূর্ণ বোধ করবেন। প্রতিদিন তিনটি জিনিসের একটি তালিকা তৈরি করুন যার জন্য আপনি সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞ।

  • আপনার বাড়ি
  • পরিবার ও বন্ধু
  • পোষা প্রাণী
  • ভালো খাবার (চকলেট!)
  • সুন্দর আবহাওয়া

কেউ আপনাকে সাহায্য করলে ধন্যবাদ দিন।

৮. স্বাস্থ্যকর খাবার খান

স্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে আপনার শরীরকে পুষ্টি জোগান দিন। পুষ্টিকর খাবার আপনাকে শক্তি দেয় এবং সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে থাকে। বেশি করে ফল, শাকসবজি এবং জটিল কার্বোহাইড্রেট খান এবং চিনি ও স্যাচুরেটেড ফ্যাটযুক্ত খাবার কমিয়ে ফেলুন।

  • দেশি ফল
  • সবজি
  • জটিল কার্বোহাইড্রেট
  • কম চিনি ও 
  • স্যাচুরেটেড ফ্যাট

৯. প্রতিদিন ব্যায়াম করুন

ব্যায়াম আপনার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করে। স্বাস্থ্যকর থাকতে সপ্তাহে প্রায় ১৫০ মিনিট মাঝারি ব্যায়াম বা ৭৫ মিনিট কঠোর ব্যায়াম করার লক্ষ্য রাখুন। এমন ব্যায়াম বেছে নিন যা আপনি উপভোগ করেন ব্যায়াম করার সময়, এতে আপনার লক্ষ্য পূরণ করা সহজ হবে।

  • নাচের ক্লাসে যোগ দিন।
  • নিয়মিত হাঁটতে যান।
  • টেনিস বা বাস্কেটবলের মতো খেলাধুলা করুন।

১০. মেডিটেশন বা ধ্যান করুন

মানসিক চাপ কমাতে এবং মানসিক সুস্থতা বাড়াতে প্রতিদিন মেডিটেশন করুন। একটি আরামদায়ক অবস্থানে বসে চোখ বন্ধ করুন। তারপর আপনার শ্বাসের উপর মনোযোগ দিন এবং মনকে শান্ত করার চেষ্টা করুন। অন্তত ১০ থেকে ১৫ মিনিট এভাবে করতে থাকুন।

  • চোখ বন্ধ করে স্বাভাবিক নিঃশ্বাস নিন
  • মন ভ্রমণ করলে ধীরে ফিরিয়ে আনুন
  • মন্ত্র বলুন: “শান্তি”, “আমি নিরাপদ”

অ্যাপস ব্যবহার করুন: Headspace , Insight Timer (ফ্রিতে গাইডেড মেডিটেশন)

১১. নিজের প্রতি সহানুভূতিশীল হন

নিজের প্রতি সদয় হন। আপনি যদি নিজের প্রতি খুব কঠোর হন, তবে আপনি সহজেই ক্লান্ত হয়ে যাবেন। আপনিও যেহেতু একজন মানুষ, তাই আপনার ভুল হতেই পারে। যখন কোনো ভুল করবেন, তখন নিজের দায়িত্ব স্বীকার করুন এবং সংশোধনের চেষ্টা করুন। তারপর সেই ভুলের অনুশোচনা থেকে বের হয়ে আসুন।

  • ভুল করলে দায়িত্ব নিন, ক্ষমা চান, তারপর এগিয়ে যান
  • অতীতের ভুলগুলো নিয়ে ঘুরে বেড়াবেন না
  • নিজেকে বলুন: “আমি আমার জন্য যথেষ্ট ভালো করছি।”

১২. নিজেকে বিশ্বাস করুন

নিজের জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আপনার অন্তরের কথা শুনুন। আপনি নিজেকে সবচেয়ে ভালো চেনেন, তাই আপনার জন্য যা সঠিক তাই করা উচিত। নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস রাখুন এবং আপনার সত্তাকে শুনতে শিখুন।

  • গভীর শ্বাস নিন, মাটির সঙ্গে যুক্ত হন
  • নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন: “এটা কি আমার জন্য ঠিক?”
  • শরীরের অনুভূতি লক্ষ্য করুন — এটাই আপনার উত্তর।

যারা আপনাকে সমর্থন করে, তাদের ঘিরে থাকুন।

১৩. নেতিবাচক বিশ্বাসকে চ্যালেঞ্জ করুন

১৩টি উপায়ে নিজেকে প্রথমে রাখুন – নিজের প্রতি ভালোবাসা শুরু করুন আজই!

নিজেকে প্রথমে রাখার বিষয়ে আপনার যদি কোনো নেতিবাচক ধারণা থাকে, তবে সেগুলোকে চ্যালেঞ্জ করুন। নিজেকে বলুন যে নিজের যত্ন নেওয়া স্বার্থপরতা বা অলসতা নয়। এটা আমার অধিকার। 

  • যখন মনে হবে, “নিজেকে অগ্রাধিকার দিয়ে আমি স্বার্থপরের মতো কাজ করছি,” তখন তার বিপরীতে ভাবুন, “অন্যদের যত্ন নেওয়ার আগে আমার নিজের যত্ন নেওয়া দরকার।”
  • যদি মনে হয়, “নতুন প্রকল্পে ‘না’ বলাটা অলসতা,” তখন নিজেকে বলুন, “সেরাটা দিতে হলে আমার বিশ্রামের বিশেষ প্রয়োজন।”

নিজেকে ভালোবাসা মানে নিজেকে গুরুত্ব দেওয়া। প্রতিদিন একটু একটু করে নিজের যত্ন নিলে একদিন আপনি দেখবেন আপনার ভিতরের আলোটাই সবাইকে আলোকিত করবে।

তাই দেরি না করে আজ থেকেই শুরু করুন নিজের যত্ন নেওয়া। মনে রাখুন—
👉 “আপনি গুরুত্বপূর্ণ, আপনি প্রয়োজনীয়, আপনি ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *