ক্যামেরা কেনার আগে পুরাতন ক্যামেরা কিনব নাকি নতুন ক্যামেরা?

একজন নতুন কন্টেন্ট ক্রিয়েটর বা ফটোগ্রাফার এর মনে প্রথম যে প্রশ্ন আসে, তা হলো- ক্যামেরা কেনার আগে পুরাতন ক্যামেরা কিনব নাকি নতুন ক্যামেরা কিনব? এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে সহজ ভাবে বোঝানো হয়েছে আপনার জন্য কোন ধরনের ক্যামেরা কেনা উচিত হবে।

এই ধরনের চিন্ত-ভাবনা গুলো আসে তখনই যখন তার বাজেট কম থাকে। অথবা সেই ব্যক্তি ভাবে আমার টাকা যেন নষ্ট না হয়। আমি প্রথমবার ক্যামেরাটা কিনে যেন ঠকে না যাই। এমন ধরনের মানুষ একটা ক্যামেরা কেনার আগের রিসার্চ করেই কোন কিছু করে থাকে।

আরো একটি বিষয় যদি খেয়াল করেন তাহলে বুঝতে পারবেন ক্যামেরা কেনার আগে পুরাতন ক্যামেরা কিনব নাকি নতুন ক্যামেরা? যেমন- একজন মানুষ একটা মোবাইল কেনার সময় যতটা এক্সাইটিং থাকে। একটা মোবাইল কেনার ক্ষেত্রে ততটা এক্সাইটিং থাকে না।

আপনি আর একটি বিষয় খেয়াল করে দেখবেন, একটা দামি মোবাইল নিজের হাতে থাকা সত্ত্বেও অন্য কারো হাতে একটি ক্যামেরা থাকলে মনে হবে যে একটা ছবি তুলি ক্যামেরা দিয়ে। তাহলে বুঝতে পারছেন একটি ক্যামেরা কতটা প্রয়োজনীয় এবং আকর্ষনীয়।

ক্যামেরা কেনার সময় যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন

ক্যামেরা কেনার আগে পুরাতন ক্যামেরা কিনব নাকি নতুন ক্যামেরা? তা প্রধানত দুই দিকে বিবেচনা করতে হয় যথা- 

  1. ক্যামেরার বাজেট।
  2. ক্যামেরা ব্যবহার।

ক্যামেরা বাজেট

পুরাতন ক্যামেরা কিনব নাকি নতুন ক্যামেরা অথবা শুধু ক্যামেরা নয়, যে কোন কিছুই কেনার প্রথম ধাপ হলো বাজেট কতো। বাজেট অনুযায়ী মডেল নির্বাচন করতে হবে। আপনার বাজেট হলো ৬০ হাজার টাকা। কিন্তু আপনি যদি ২ লাখ টাকার ক্যামেরা দেখেন তাহলে তো হবে না। এই কারণেই আপনার বাজেট নির্ধারণ করা একান্ত জরুরি। তাই বাজেটের মধ্যে ভালো ক্যামেরা নির্বাচন করতে হবে।

ক্যামেরার ব্যবহারের উপর নির্ভর করে ক্যামেরা নির্বাচন।

আপনি কেমন কাজ করতে চান আপনার কাঙ্খিত ক্যামেরা দিয়ে? যদি শখের বসে ক্যামেরা কেনেন তাহলে এক ধরনের ক্যামেরা নির্বাচন করতে হবে। যদি শুধু ছবি করতে চান তাহলে এক ধরনে। ছবির মধ্যে আবার পার্থক্য আছে। যেমন: 

  • রাতে ছবি তোলার জন্য এক ধরনে
  • ল্যান্ড স্কাপ ছবি তোলার জন্য এক ধরনে
  • পোট্রেট ছবির জন্য এক ধরনের
  • ভিডিও করার জন্য এক ধরনের ক্যামেরা কিনতে হবে। 

ক্যামেরা কেনার আগে নিজের ক্যামেরা নিজেই নির্বাচন করার উপায়

আপনি যদি নিচের বিষয় গুলো বুঝে সেই অনুযায়ী আপনার বাজেট এবং ব্যবহারের সাথে মিলিয়ে একটি ক্যামেরা কিনতে পারেন তাহলে একটি ভালো ক্যামেরা কিনতে পারেন। তাছাড়া তখন আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন আপানার পুরাতন ক্যামেরা কিনা উচিত নাকি নতুন ক্যামেরা। তাই অবশ্যই মন ‍দিয়ে নিচের বিষয় টুকু পরে নিন।

  1. সেন্সর আকার: ক্যামেরার সেন্সর যত বড় হবে আলো তত বেশি প্রবেশ করবে। তাহলে ছবি তত ভালো হবে এবং ভিডিও তত ভালো হবে। 
  2. রেজুলিউশন (মেগাপিক্সেল): ক্যামেরার রেজুলেশন বেশি থাকলে ছবি অনেক বড় করলেও ফাটে না। প্রিন্ট এর ক্ষেত্রেও ছবি ভালো হয়। 
  3. লেন্সের গুণমান ও অ্যাপারচার (F-stop): ছবি ব্যাগ্রাউন্ড করার ক্ষেত্রে যত কম (ছোট F-stop সংখ্যা, যেমন f/1.8 বা f/2.8) হবে তত ভালো হবে। 
  4. শাটার স্পিড: চলন্ত কোন বস্তুর ছবি তুলতে হলে শাটার স্পিড বেশি দেখে কেনা উচিত। খেলাদুলা ভিডিও, হাঁটা বা দৌড়ানোর ছবি বা ভিডিও করার জন্য শাটার স্পিড বেশি দেখে ক্যামেরা কিনবেন। 
  5. ISO রেঞ্জ: ISO বেশি হলে অন্ধকারে ও ভালো ছবি বা ভিডিও করা যায়। কিন্তু একেবারে বেশি ISO দিলে ছবিতে নয়েজ চলে আসে। অগ্নিসংযোগ এর মতো দূর্ঘটনার মধ্যে রিপোর্টাররা এর ব্যবহার করে থাকে। 
  6. ইমেজ স্ট্যাবিলাইজেশন: ইমেজ স্ট্যাবিলাইজেশন থাকলে হাতে ধরে ছবি বা ভিডিও করার সময় ছবিতে ঝাকুনি লাগে না। তাই আপনি ক্যামেরা কেনার আগে অবশ্যই দেখে নেবেন যে ক্যামেরাতে কি ইন-বিল্ট ক্যামেরা স্ট্যাবিলাইজেশন বা লেন্সে অপটিক্যাল স্ট্যাবিলাইজেশন আছে কি না। 
  7. ফোকাসিং ক্ষমতা (অটোফোকাস): একটি ক্যামেরার অত্যন্ত দুরুত্বপূর্ণ একটি ফিচার হলো অটোফোকাস। যখন কোন সাবজেক্ট মুভিং করে তখন ফেস ডিটেকশন ও ট্র্যাকিং করা জন্য অটোফোকাস সহায়ক হয়। 
  8. ফ্রেম রেট: ভিডিও করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ফ্রেম রেট অতি আবশ্যক একটি ফিচার। স্ট্যান্ডার ভিডিও জন্য 24 fps, 30 fps হলেই হয়। যখন স্লো-মোশন ভিডিও করার প্রয়োজন হবে তখন 60 fps বা তার বেশি ফ্রেম রেট হলে ভালো হয়। তাই আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী ফ্রেম রেট নির্বাচন করে ক্যামেরা কিনবেন। 
  9. ডাইনামিক রেঞ্জ: ডায়নামিক রেঞ্জ বেশ হলে উচ্চ আলোতে ছবির ছায়া দেখা যায়। অধিক ডাইনামিক রেঞ্জ এবং ক্যামেরায় HDR সুবিধা থাকলে ছবির মান আরো উন্নত করে। 
  10. মাইক্রোফোন ইনপুট (ভিডিওর জন্য): ভিডিতে ভালো মানের অডিও ক্যাপচার করার জন্য বাড়তি মাইক্রোফোন ইনপুটের অপশন আছে কিনা তা দেখে নেবেন। মাক্রোফোন ইনপুট অপশন না থাকলে তখন ভালো অডিও রেকর্ড করার জন্য আলাদা অডিও রের্কডার প্রয়োজন হবে। 
  11. ব্যাটারি লাইফ: যে ক্যামেরাটি ক্রয় করবেন সেটার ব্যাটারি লাইফ অর্থাৎ কত mah এর ব্যাটারি সাপোর্ট করবে। কারন অল্প শক্তি সম্পন্ন ব্যাটারি হলে আপনার বার বার চার্জ দেওয়া লাগবে।
  12. স্টোরেজ অপশন ও ফাইল ফরম্যাট: বড় ফাইল (RAW বা 4K ভিডিও) ধারন করার জন্য বেশি স্টোরেজ প্রয়োজন হবে। RAW ফরম্যাট এ ছবি তুললে তা এডিটিং এর সময় সহায়ক হয়। তাই অবশ্যই স্টোরেজ অপশন দেখে নেবেন যে ক্যামেরা কিনবেন তার সর্বোচ্চ স্টোরেজ সাপোর্ট ক্ষমতা কতটুকু। যা আছে তা দিয়ে আপনার হবে কি না। 
  13. ক্যামেরা সেটিংস এবং ম্যানুয়াল কন্ট্রোল: একটি ক্যামেরার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফিচার হলো ম্যানুয়াল কন্ট্রোল। কারণ অটোফোকাসের থেকে ম্যানুয়াল কন্ট্রোলে রেখে ISO, সাটার স্পিড এবং অ্যাপাচার এর সঠিক কম্বিনেশন করতে পারলে হাই কোয়ালিটির ছবি তোলা যায় অল্প দামের ক্যামেরা থেকে। প্রফেশনাল ক্যামেরাম্যানরা সব সময় এই মুডে রেখেই ছবি বা ভিডিও ধারণ করে। 

উপরের বিষয়গুলো আপনি ভালো করে বুঝলে সেই অনুযায়ী ক্যামেরা সন্ধ্যান করবে এবং ফিচার দেখে নিজের ক্যামেরা নিজেই নির্বাচন করতে পারবেন। যে সকল বিষয়ে এখানে বলা হয়েছে তা আপনি ভালো করে বুঝতে শিখলে আপনার আর ক্যামেরা কেনার আগে পুরাতন ক্যামেরা কিনব নাকি নতুন ক্যামেরা? তা শোনা বা দেখা লাগবে না।

তাহলে পুরাতন ক্যামেরা কিনব নাকি নতুন ক্যামেরা কিনব?

কেনার আগের এই প্রশ্নটা সবার মাঝে আসে। পুরাতন ক্যামেরা কিনব নাকি নতুন কিনব? কারণ একটি ক্যামেরার অনেক দাম। যে সকল কন্টেন্ট ক্রিয়েটর বা ফটোগ্রাফার ক্যামেরা কিনতে চান তাদের বাজেট থাকে অল্প। যার কারণে তাদের মনে এই প্রশ্নটা আসে।

একটি ক্যামেরা অনেক দিন ভালো থাকে। ক্যামেরা সহজে নষ্ট হয় না। যদি কোন আঘাত না লাগে তাহলে কোন সমস্যা হয় না সহজেই। তাই আমার মতে আপনি পুরাতন ক্যামেরা কিনতে পারেন আপনার কন্টেন্ট ক্রিয়েশনের যাত্রা শুরু করার জন্য। আর যদি নতুন ক্যামেরা কিনতে পারেন তাহেল তো ভালোই।

১০০% কপিরাইট ফ্রি ৮৩টি ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের তালিকা

পুরাতন ক্যামেরা কেনার আগে যে বিষয়গুলো লক্ষ রাখতে হবে

  • ক্যামেরায় কোন আঘাত বা স্ক্রাচ আছে কি না। যদি কোন স্ক্রাচ থাকে তাহলে না কেনাই ভালো।
  • ক্যামেরা আগে কেমন ইউজার ব্যবহার করেছেন? কোন প্রফেশনাল ক্যামেরা ফটোগ্রাফার ব্যবহার করেছেন নাকি কেউ শখের বসে কিনেছিলেন তাই বিক্রি করছেন। যদি কোন প্রফেশনাল ব্যক্তি ব্যবহার করে থাকেন তাহলে সেই ক্যামেরা না কেনা ভালো। কারণ তারা যখন সেই ক্যামেরা দিয়ে ভালো মানের ছবি ধারণ করতে পারে না। তখন সেটা বিক্রি করে দেয়। 
  • ক্যামেরা কেনার আগে আপনি ক্যামেরাটি দিয়ে ভালো করে ছবি ভিডিও করে নেবেন। কোন সাদা বস্তুর ছবি তুলবেন। দেখবেন ছবিতে কোন দাগ আছে কি না। 
  • ক্যামেরা কেনার আগে শাটার কাউন্ট দেখে কিনবেন। কারণ যদি বেশি শাটার কাউন্ট হয়ে থাকে তাহলে আপনি বেশি দিন ব্যবহার করতে পারবেন না। 
  • পুরাতন ক্যামেরা কেনার আগে আর যে দিকে খেয়াল রাখতে হবে তা হলো ক্যামেরা সেন্সর এর কোন দাগ বা কোন সমস্যা আছে কিনা। 
  • তারপর দেখতে হবে কোন বাটনে কোন সমস্যা আছে কি না। যদি থাকে তাহলে না কেনা ভালো। 
  • তারপর দেখতে হবে ডিসপ্লেতে কোন সমস্যা আছে কিনা। ডিসপ্লেতে সমস্যা থাকছে আপনি ভালো ছবি ধারণ করতে পারবেন না। 
  • ক্যামেরার চার্জিং পোর্ট ভালো করে দেখে নেবেন। চার্জিং পোর্টে কোন সমস্যা আছে কিনা।
  • ক্যামেরার ভিউ ফাইন্ডার ঠিক আছে কি না। ভিউ ফাইন্ডার ভালো না থাূকলে ভালো ছবি তুলতে পারবেন না সূর্যের আলোতে গিয়ে। 
  • ব্যাটারিতে কতক্ষন চার্জ থাকে সেটা দেখে নিবেন। 
  • মেমোরি পোর্ট ঠিক আছে কিনা এটা ভালো করে দেখে নিতে হবে। মেমোরি পোর্ট এ কোন সমস্যা থাকলে কেনার প্রয়োজন নাই।  
  • আর যে দিকে খেয়াল রাখতে হবে 

নতুন ক্যামেরা কিনতে গেলে যে বিষয় গুলো চেক করে নিবেন

একটি ক্যামেরা কেনার জন্য আপনি উপরে “নিজের ক্যামেরা নিজেই নির্বাচন করার উপায়” বিষয়গুলো দেখে নিবেন। আপনি যদি প্রথমবার ক্যামেরার সেটিং সম্পর্কে জেনে থাকেন তাহলে হয়তো আপনার একটু বুঝতে সমস্যা হতে পারে। তাহলে আপনি একজন অভিজ্ঞ কারো সাথে বসে বিষয়গুলো বুঝে নিতে পারেন। তাছাড়া আপনি যদি অনলাইন থেকে কিনতে চান তাহলে কেনার আগে অবশ্যই রেটিং এবং রিভিউ দেখে নেবেন।

আপনি যখন একটি মডেল নির্বাচন করবেন। তখন সেই মডেল অনুযায়ী ইউটিউব বা ফেসবুক থেকে ভিডিও দেখে নিতে পারেন।

নতুন ক্যামেরা কেনার সুবিধা:

  • প্রথমত নতুন ক্যামেরা কিনলে তার ছবির কোয়ালিটি অনেক ভালো পাওয়া যায় পুরাতন ক্যামেরার তুলনা। 
  • কোম্পানি থেকে ফ্রি সার্ভিসিং এর সুযোগ থাকে। 
  • দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারের নিশ্চয়তা থাকে। 
  • সকল আপডেট ফিচার ব্যবহারের সুবিধা পাওয়া যায়। 
  • ক্যামেরার সাথে ফ্রি প্রোডাক্ট পাওয়া যায় ইত্যাদি। 

তাহলে আমি পুরাতন ক্যামেরা কিনব নাকি নতুন ক্যামেরা কিনব?

মূল কথা হলো আপনার যদি মুলধন থাকে তাহলে আপনি নতুন ক্যামেরা কিনতে পারেন। তাহলে আপনি ব্যবহার করে মজা পাবেন । 

আর যদি বাজেট না থাকে তাহলে দেখে শুনে পুরাতন ক্যামেরা কিনবেন। একটি ক্যামেরা সহজে নষ্ট হয় না। আপনি পুরাতন ক্যামেরা কিনে আপনার যাত্রা শুরু করতে পারেন। পরে যখন সামর্থ্য হবে তখন নতুন ক্যামেরা কিনতে পারেন। 

আর একটা কত হলো ক্যামেরা দামি বা কম দামি তা মুল বিষয় না। মুল বিষয় হলো ভালো ছবি তুলতে জানা। সঠিক ফ্রেম চয়েচ করা। সেটিং ঠিক করতে পারা। যখন আপনি সঠিক ISO, শাটার স্পিড এবং অ্যাপাচার সেট করতে পারবেন তখন ভালো মানের ছবি ধারন করতে পারবেন ।

এখন আপনি নিজেই সিদ্ধান্ত নিন পুরাতন ক্যামেরা কিনব নাকি নতুন ক্যামেরা কিনবেন। আমাদের সাজেস্ট হলো বাজেট কম থাকলে পুরাতন কিনতে পারেন। আর ভালো বাজেট থাকলে নতুন ক্যামেরা কিনবেন। আশা করি এখন আপনি বুঝে গিয়েছেন আপনার পুরাতন ক্যামেরা কিনব নাকি নতুন ক্যামেরা এই কথা কারো কাছ থেকে আর শোনার প্রয়োজন পরবে না। 

পুরাতন ক্যামেরা কেনার ঠিকানা

Share Now

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *