আপনি কি জানেন টিকটক, শর্টস এবং রিলস ভিডিও দেখার ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে

Share This Post
ভিডিও দেখার ক্ষতিকর দিক

আপনি কি জানেন TikTok, Shorts এবং Reels ভিডিও দেখার ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে

আজকের ডিজিটাল যুগে, টিকটক, শর্টস এবং রিলের মতো বিভিন্ন সংক্ষিপ্ত ভিডিও প্ল্যাটফর্ম গলো মানুষের জিবনের সাথে জড়িয়ে গিয়েছে। কিন্তু আপনি কি জানেন টিকটক, শর্টস এবং রিলস ভিডিও দেখার ক্ষতিকর/নেতিবাচক দিকগুলো সম্পর্কে? যা মানুষের অভ্যাসে পরিনত হয়ে উঠেছে দিন দিন। মানুষ এই সংক্ষিপ্ত ভিডিও গুলোর নেবিবাচক প্রভাব সম্পর্কে না জানার কারণে দিন দিন এর ব্যবহার বাড়িয়ে চলছে। এই ধরনের প্লাটফর্ম গুলোতে যে সকল আকর্ষনীয়, মজাদার ভিডিও দেখার সুযোগ পায় সকল ইউজারগন। তারা একবার দেখা আরম্ভ করলে সহজে আর বের হতে পারে না। যার ফলে মানুষের বিভিন্ন শারিরীক এবং মানসিক রোগ আক্রান্ত হয়ে পড়ছে।

টিকটক, শর্টস, রিলসের ভিডিও দেখার প্রভাবে যে সব সমস্যা হয়ে থাকে  মানুষের তা জেনে নিন: 

কাজে অমনোযোগী

মনোযোগের সময় কমে যাওয়া

এই সকল প্লাটফর্ম গুলোর ভিডিও ছোট হওয়ার কারণে দ্রুত তথ্য প্রদানের চেষ্টা করে থাকে। যা আমাদের মস্তিষ্ককে বারবার নতুন কিছু খুঁজতে প্রশিক্ষিত করে। এই ক্রমাগত নতুন কিছু খোজার প্রবণতা মানুষের অভ্যাসে পরিণত হয়ে ওঠে। যা পরবর্তীতে মানুষের মস্তিষ্ককে দির্ঘক্ষণ মনোযোগ ধরে রাখতে বাধা প্রদান করে। ফলে একজন মানুষ তার বাস্তব জিবনের কাজ গুলো করতে পারে না। যেমন: 

  • দীর্ঘসময় ধরে পড়াশোনা করতে পারে না। 
  • চাকুরী জিবনে/ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে কোন প্রজেক্ট ভিত্তির কাজ করতে পারে না। 
  • এক মনে বসে দির্ঘক্ষণ কোন চিন্তাভাবনা করতে পারে না। 
  • প্রতিপক্ষের কোন বক্তব্য বা দির্ঘসময়ের কোন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারেনা। 

এই সমস্যা গুলোর সমাধান না করলে কোন ব্যক্তি তার ব্যক্তিগত জিবনে উন্নতি সাধন করতে পারবে না।

আসক্তি এবং সময় নষ্ট হওয়া

প্রয়োজনীয় সময় নষ্ট করা

এই প্ল্যাটফর্মগুলোতে “অবিরাম স্ক্রল” ফিচারটি ব্যবহারকারীদের অনবরত ভিডিও দেখতে উদ্বুদ্ধ করে। প্লাটফর্ম গুলোতে অসংখ্য আকর্ষনীয় ভিডিও থাকায় মানুষ একটার পর আরেকটা ভিডিও দেখতেই থাকে। যা একজন সাধারণ মানুষের বাস্তব জীবন এক সময় বিষাদগ্রস্ত করে তুলতে পারে। 

কারণ আপনি দেখবে যেসকল ইউজারগণ এই ধরনের প্লাটফর্ম গুলোতে এন্টারটেইনমেন্ট নেওয়ার জন্য আসে। ভাবে ৫ মিনিট ভিডিও দেখে বের হয়ে যাবো। কিন্তু দেখা যায় কখন যে ৫ মিনিট কেটে গিয়েছে সে নিজেই জানে না। এই প্রধান কারণ হলো যখন মানুষ কোন বিষয় দেখে বা শুনে নিজেকে আনন্দিত মনে করে তখন তার ব্রেইন থেকে বেশি ডোপামিন নিসরণ হয়। যার করণে সেই ব্যক্তি আনন্দিত থাকা অবস্থায় বুঝতে পারে না যে তার সময় বৃথা ব্যয় হয়ে যাচ্ছে। 

এতে যে ক্ষতি হয় তা হলো:

  • প্রতিনিয়ত তার প্রডাক্টিভ সময়টুকু ব্যয় হয়ে যায়। 
  • সময়ের কাজ সময়ে করতে পারে না।
  • অফিসে বা বিদ্যালয়ে স্যারের কাছে খারাপ হয়ে যায়। 
  • কারো কাছে তার কথার মূল্য থাকে না। 
  • সবার কাছে একসময় অবিশ্বাসী হয়ে পড়ে। 

মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা

মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা

এই প্লাটফর্ম গুলোর প্রভাবে প্রায়ই সবাই মানসিক সমস্যায় ভোগে। এখানে যেসকল ভিডিও এবং ছবি থাকে সেগুলো থাকে ফটোশপ এবং বিভিন্ন ভিডিও ইডিটিং সফটওয়্যার এর কারসাজি। দেখা যায় একজন কালো রংয়ের মানুষ ফর্সা হয়ে যায় এক মিনিটে। তাছাড়া আরো অনেক বিষয় আছে যেগুলো বাস্তব জিবনে নেই সেগুলো টিকটক, রিল এবং শর্টস এর মধ্যে দেখা যায়। 

অনেক ইউজার আছে এই সমস্ত বিষয় কোনটা সত্যি কোনটা মিথ্যা তা নির্নয় করতে পারে না। তাছাড়া আর একটা বড় বিষয় হলো এই সকল ভিডিওতে যে ধরনের পোশাক, বডি ফিগার, খাবার, স্টাইল দেখা যায়। এগুলো দেখে অনেক দর্শক তার বাস্তব জিবনে পেতে চায় যেটা সম্ভব হয় না। যার ফলে শুরু হয় নানান ঝামেলা। 

আমাদের ফেসবুক পেইজ ফলো করুন: Tooaan facebook

একজন মানুষের চরিত্র গঠন হয় তার আশে পাশের ৫ জনের চরিত্র থেকে। তাই একটি প্রবাদ আছে “সংঙ্গ দোষে লোহা ভাসে”। বর্তমান যুগে মানুষের সঙ্গি-সাথী কম থাকে বাস্তব জিবনে। বেশি হয়ে থাকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে। ছোট ছোট ভিডিও গুলোতে মানুষকে আকর্ষন করার জন্য অনেকে বিভিন্ন বিভ্রান্তকর কাজ, কথা-বার্তা, পোশাক-পরিচ্ছদ পড়ে থাকে। যে বিষয় গুলো একজন সাধারণ মানুষ তার সমাজে করলে সবাই তাকে পাগল বলে থাকবে। 

আরো পড়ুন: যে ১২টি বই পড়লে জীবন বদলে যাবে

তারপর মানুষ আর যে কাজটা করে থাকে সেটা হল: ভাচুয়াল জগতের এই সমস্ত বিষয়ের সাথে তাল মেলাতে গিয়ে মানুষ বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় প্রতিযোগীতা, এবং নিজের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করে ফেলে। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রদর্শিত সুন্দর জীবনযাপন, সৌন্দর্য, এবং সফলতার কৃত্রিম চিত্র দেখে মানুষ নিজের জীবনের সাথে তুলনা করে হতাশ বোধ করতে করে। এই সমস্ত বিষয় গুলো দির্ঘদিন চলতে থাকলে একসময় মানুষ ভিষন্নতা, দুশ্চিন্তা এবং আত্মবিশ্বাসের অভাবের মতো মানসিক সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। 

ডিপ্রেশন ও উদ্বেগ:

Dipression

 সামাজিক মিডিয়ায় প্রদর্শিত নিখুঁত জীবন দেখে অনেকেই নিজেকে অন্যদের তুলনায় কম মনে করতে পারে। এতে ডিপ্রেশন ও উদ্বেগের মতো মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।

প্রোডাক্টিভিটি কমে যাওয়া

প্রোডাক্টিভিটি কমে যাওয়া

টিকটক বা শর্টসের মতো প্ল্যাটফর্মগুলোতে সময় কাটাতে কাটাতে মানুষ অনায়াসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যয় করে ফেলে। এই শর্টস ভিডিও মদ, গাজা, ইয়াবার মতোই আসক্তিকর একটি বিষয়। এই নেশায় পড়লে মানুষ কাজের বা অধ্যয়নের সময়েও এই ভিডিও দেখে। যার ফলে মানুষের প্রডাক্টিভ সময়টুকু এই অপ্রয়োজনীয় ভিডিও দেখে সময় নষ্ট করে ফেলে। ফলে কাজের গতি কমে যায় এবং প্রোডাক্টিভিটি হ্রাস পায়। একসময় তারা মনে করে এই অপ্রয়োজনীয় ভিডিও দেখে তাদের সময় নষ্ট হয়ে গিয়েছে। কিন্তু তখন তার আর কিছু করার থাকে না। তখন তার আত্নবিশ্বাস কমে যায়। কোন কাজে সে সফলতা পায় না। 

সংবেদনশীলতা হ্রাস

Loss of interest in work

এ ধরনের প্ল্যাটফর্মগুলোতে দেখানো ভিডিওগুলো খুব দ্রুতগতির এবং মজার হওয়ার কারণে দীর্ঘমেয়াদী বা গভীর বিষয়গুলোতে মানুষের আগ্রহ কমে যায়। মানুষ দ্রুত বিনোদনের জন্য এই ছোট ছোট ভিডিও দেখার অভ্যাস হয়ে গেলে, সেই ব্যাক্তি ধীরে চলা, ডকুমেন্টরি, পডকান্ট, মুভি, সাহিত্য, গভীর বিশ্লেষণ মুলক কোন কনটেন্টের প্রতি তার আগ্রহ কমে যায়। টিকটক বা শর্টসের মতো প্ল্যাটফর্মগুলোতে যে ভিডিও থাকে, সেগুলোতে কোন পুর্ণ তথ্য খুজে পাওয়া যায় না। বরং এগুলো দেখার ফলে কোন তথ্য বহুল বড় ভিডিও দেখার আগ্রহ থাকে না। এতে করে মানুষ তার জিবনে নতুন কিছু বা কোন অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে না। একজন মানুষ নতুন কিছু না শিখলে বা কোন অভিজ্ঞতা অর্জন না করলে সে কোনদিন সফলতা লাভ করতে পারে না। এই ছোট ভিডিও এতটাই ক্ষতিকর। 

ঘুমের ব্যাঘাত

ঘুমের সমস্যা হয়

প্রায়শই মানুষ টিকটক বা রিল স্ক্রল করতে করতে রাত কাটিয়ে দেয়। মানুষের সময় জ্ঞান থাকে না। ঘুমানোর আগে মোবাইলের স্ক্রিনের আলো মানুষের মস্তিষ্কে মেলাটোনিন হরমোনের উৎপাদন কমিয়ে দেয়, যা ঘুমের চক্রের জন্য অতিপ্রয়োজনীয়। অতিরিক্ত স্ক্রল করার ফলে মানুষের পর্যাপ্ত ঘুম না হলে তা শরীর ও মনের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। মানব শরীরের ঘুমের ঘাটতি শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

চোখের সমস্যা

চোখের সমস্যা

দীর্ঘক্ষণ মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকার ফলে চোখের নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন:

  • চোখ ব্যাথা করা।
  • চোখ লাল হয়ে যাওয়া।
  • চোখ জালা পোড়া করা।
  • চোখে চুলকানি। 
  • চোখে আবসা দেখা ইত্যাদি।

মেরুদণ্ডের সমস্যা

মেরুদণ্ডের সমস্যা

এই ধরনের ভিডিও নেশার মতো হয়ে থাকে। একবার দেখা শুরু করলে শেষ করা যায় না। তখন একই অবস্থানে দির্ঘক্ষণ বসে থাকার ফলে মেরুদন্ডে ব্যাথা হয়ে যায়। মেরুদন্ডে ব্যাথা হলে মানুষের দৈনন্দিন কাজকর্ম গুলো সে ভালো করে করতে পারে না।

সম্পর্কের অবনতি

সম্পর্কের অবনতি

যখন মানুষ বেশির ভাগ সময় ডিজিটাল ডিভাইস এবং সোস্যাল মিডিয়ার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে থাকে। বাস্তব জিবনের সম্পর্কের প্রতি তার টান কমে যায়। সামাজিক উন্নয়ন মূলক বিভিন্ন কাজের প্রতি তার মনোযোগ কমে যায়। একটানা মোবাইলে শর্টস ভিডিও দেখতে থাকলে পরিবারের সদস্য এবং বন্ধু বান্ধব বা প্রিয়জনের প্রতি ও তার উদাসহীনতা চলে আসে। এক সময় এমন হয় যে কোন সেমিনার বা অনুষ্ঠানে নিজে শারীরিকভাবে উপস্থিত থাকা সত্তেও তার মানসিক কোন প্রতিক্রিয়া দেখা যায় না। ফলে সামাজিক সম্পর্কের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

এই সমস্যা থেকে মুক্তি কিছু কার্যকরী উপায়।

সময় নির্ধারন করা:

আপনি যখন এই ধরনের প্লাটফর্মগুলোতে প্রবেশ করবেন তখন মোবাইলে নোটিফিকেশন বা এলার্ম সেট করে রাখুন। যেন নির্দিষ্ট সময়ে আপনি এখান থেকে বের হয়ে পারেন।

মোবাইল স্কিন স্ক্রল বন্ধ:

এখন বিভিন্ন অ্যাপ আছে যেগুলো আপনার মোবাইলে ইনস্টল করলে আপনার মোবাইলের অটো স্ক্রল বন্ধ হয়ে যাবে। যখন অটো স্ক্রল অফ থাকবে তখন আপনি সহজেই এই ভিডিওর নেশা কাটাতে পারবেন। অ্যাপের নাম:

ডাটা লিমিড করে রাখা:

 আপনি যখন টিকটক, শর্টস এবং রিল ভিডিও দেখবেন তখন আপনার মোবাইলের ডাটা লিমিট সেট করে রাখবেন। এই টেকনিক ও অনেক কার্যকরী হতে পারে।

নিজেকে ব্যস্ত রাখা:

আপনি চেষ্টা করবেন সবসময় নিজেকে অন্য কাজে ব্যস্ত রাখতে। কোথাও একা বসে না থাকার চেষ্টা করা।

নিজের জিবনে লক্ষ্য নির্ধারন করা:

প্রতিটি মানুষের অবশ্যই স্বপ্ন দেখা এবং স্বপ্ন পুরণ করার জন্য কাজ করা উচিত। লক্ষ্য ঠিক রেখে সব সময় কাজ করা উচিত। নিজের স্বপ্ন পূরণ করার জেদ যখন মাথায় সেট হয়ে যাবে তখন এই শর্টস ভিডিও দেখার প্রতি মন টানবে না।

ভিডিওর ধরন পরিবর্তন করুন:

আপনি ইনফরমেশন মুলক ভিডিও গুলো দেখতে পারেন। মোটিভেশনাল ভিডিও দেখতে পারেন। এবং যে ভিডিও গুলো দেখার পরে আপনার নিজেরই মনে হয় এই সময়টুকুই আমার ব্যর্থ চলে গেল। আমি এই সময় এই ভিডিওটা না দেখে অন্য কোন কাজ করলে বেশি লাভবান হতাম। এমন চ্যানেল গুলো আনফলো/ আনসাবস্ক্রাইব করে দিন এখনই। 

নোটিফিকেশন বন্ধ:

আপনি আপনার মোবাইলে অপ্রয়োজনীয় নোটিফিকেশন বন্ধ রাখুন। যাতে সেই চ্যানেল থেকে ভিডিও আপলোড করলে আপনার কাছে না আসে।

হিস্টরি ডিলিট করুন:

আপনি আপনার মোবাইলে সকল হিস্টরি ডিলিট করুন। তাহলে আপনার কাছে পুরাতন ভিডিও গুলো আর আসবে না।

সামাজিক সম্পর্ক গড়ে তুলুন:

মানুষের সাথে সরাসরি কথা বলুন। পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে সময় কাটান।

প্রকৃতি উপভোগ:

আপনার আশে পাশের সুন্দর সব প্রকৃতির কাছে যান। প্রাকৃতিক পরিবেশ সরাসরি সামনে থেকে উপভোগ করুন। মানুষের উপকার করুন। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *