টাকা সঞ্চয় করার উপায় – এই নিয়ম গুলো মানলে দ্রুত সঞ্চয়ী হয়ে উঠবেন

Share This Post
টাকা সঞ্চয় করার উপায়
টাকা সঞ্চয় করার উপায়

টাকা সঞ্চয় করার ১০টি উপায় সম্পর্কে জানুন

টাকা সঞ্চয় করার উপায় না জানলে সে জিবনে সফলতা অর্জন করতে পারবেন না। তাই প্রতিটি মানুষের টাকা সঞ্চয় করার উপায় সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা রাখতে হবে। প্রতিটি মানুষ প্রতি দিনে কোন না কোন উপায়ে টাকা ইনকাম করে থাকে। কিন্তু তাদের সঞ্চয় করার সঠিক জ্ঞান না থাকায় তারা টাকা আয় করতে পারে না। 

টাকা সঞ্চয়ের গুরুত্ব

টাকা সঞ্চয়ের গুরুত্ব অপরিসীম। যে কোন ব্যক্তি বা পরিবারের টাকা সঞ্চয় করা একান্ত কর্তব্য। টাকা সঞ্চয় করার কিছু গুরুত্বপুর্ণ কারণ নিচে দেওয়া হলো।

  • টাকা সঞ্চয় থাকলে এমার্জেন্সি কোন বিপদের সময় কারো কাছে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না।  
  • নিজের চাহিদা গুলো পুরণ করা যায়।
  • নিজের লক্ষ্য পূরণ করা যায়। 
  • নিজের মনে সব সময় আত্নবিশ্বাস থাকে। 

হাতে টাকা থাকে না কেন

হাতে টাকা থাকে না তার পিছনে অনেক কারণ আছে। এই কারণ গুলোর মধ্যে প্রধানত যে কারণ তা হলো নিজের কোন লক্ষ্য নেই। আর একজন মানুষের লক্ষ্য সেট না থাকলে সে কোন দিন টাকা সঞ্চয় করতে পারবে না। তাই প্রতিটি মানুষের লক্ষ্য ঠিক করতে হবে। 

লক্ষ্য আবার দুই ধরনের যথা:

  1. স্বল্প মেয়াদী লক্ষ্য
  2. দীর্ঘ মেয়াদী লক্ষ্য। 

স্বল্প মেয়াদী লক্ষ্য: যে লক্ষ্য গুলো অল্প সময়ে পূরণ করা যায় তাকে স্বল্প মেয়াদি লক্ষ্য বলে। আরো বিস্তারিত ভাবে বলতে গেলে ১ মাস থেকে ১ বছরের মধ্যে যে লক্ষ গুলো পূরণ করা যায় তাকে স্বল্প মেয়াদী লক্ষ্য বলে। যেমন: একটি মোবাইল কেনা, কোথাও ঘুরতে যাওয়া, এমন  বিষয় গুলো। 

দীর্ঘ মেয়াদী লক্ষ্য: যে লক্ষ্য গুলো পুরন করতে বেশি সময় লাগে এবং অনেক দিন তার প্রভাব থাকে তাকে দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য বলে। যেমন: একটি বাড়ি কেনা, জমি কেনা, গাড়ি কেনা এমন ধরনের লক্ষ্য গুলো। এই ধরনের লক্ষ্য গুলো পূরণ করতে হলে অনেক টাকার প্রয়োজন হয়। 

তাই আপনি যদি কোন লক্ষ্য সেট করতে পারেন তাহলে আপনি সঞ্চয় করতে পারবেন। কারণ আপনার লক্ষ্য পুরণ করতে হলে টাকার প্রয়োজন হবে। তখন আপনি টাকা জমানোর জন্য টাকা সঞ্চয় করার উপায় গুলো সম্পর্কে জানবেন। এবং নিজে একজন সঞ্চয়ী হয়ে উঠবেন। 

টাকা সঞ্চয় করার উপায় 

১। বাজেট তৈরি করুন

আপনি টাকা সঞ্চয় করতে চাইলে প্রথমেই আপনার পরিবারের বাজেট তৈরি করুন। কারণ পারিবারের একটি বাজেট থাকলে সেই অনুযায়ী খরচ হবে। যদি আপনি পারিবারিক বাজেট তৈরি করেন তাহলে আয় অনুযায়ী ব্যয় করতে পারবেন। তা না হলে আপনার কত টাকা আয় কত টাকা ব্যয় তার সঠিক হিসাব পাবেন না।

যার কারণ কখন যে আপনার আয় থেকে বেশি ব্যয় হয়ে যাবে তা বুঝতে পারবেন না। এজন্য আপনার টাকা সঞ্চয় করতে হলে আগে পারিবারিক বাজেট তৈরি করতে হবে।  

২। স্বয়ংক্রিয় সঞ্চয় ব্যবস্থা চালু করুন

আপনার আয় থেকে প্রতি মাসে একটি অংশ সঞ্চয়ের জন্য আগেই তুলে রাখুন। যদি মাসিক বেতন পান তাহলে বেতন পাওয়ার সাথে সাথে সঞ্চয়ী ব্যাংক একাউন্টে স্থানান্তর করে ফেলুন। 

আর যদি দৈনিক বা সাপ্তাহিক বেতন পান তাহলেও এই একই কাজটি করতে হবে। হাতে নগদ টাকা আসলেই কোন অবস্থাতেই পরে সঞ্চয় করবো বলে টাকা হাতে রেখে দেওয়া যাবে না। তাহলে কিন্তু সেই টাকা খরচ হয়ে যাবেই। 

৩। প্রয়োজনীয় ও অপ্রয়োজনীয় খরচ আলাদা করুন

টাকা সঞ্চয় করার জন্য প্রয়োজনীয় ও অপ্রয়োজনীয় খরচ আলাদা করতে হবে। কারণ আপনি খেয়াল করবেন যে অনেক খরচ আছে যে খরচ গুলো করার পরে আপনার মনে হয় যে এই খরচ টা না করলেও হতো। আপনি এমন সব খরচ গুলো বাদ দিয়ে দিবেন। 

শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় খরচ গুলোর দিকে নজর দিতে হবে। আর বাকি সকল খরচ কমিয়ে দিতে হবে।

আমাদের ফেসবুক পেইজ সম্পর্কে জানতে হলে ফলো করুন। facebook

৪। টাকা সঞ্চয়ের জন্য বিকল্প উপায়ে খরচ কমান

টাকা সঞ্চয় করার জন্য আপনার খরচ গুলোকে বিকল্প উপায়ে কমাতে পারেন। যেমন আপনি অপ্রয়োজনীয় সকল সাবস্ক্রিপশন গুলো বন্ধ করে দেবেন। বিনোদন যদি নিতে হয় তাহলে দেখবেন কোন অফার আছে কিনা তাহলে আপনি কিনতে পারবেন। 

কোন জিনিস কিনতে গেলে একটু দর করে কিনতে হবে। বাইরের খাবার না খেয়ে বাড়ির খাবার খেতে হবে। সব জায়গায়র নিমন্ত্রন রক্ষা করা যাবে না। যেখানে না গেলে বেশি কোন সমস্যা হবে না সেখানে যাওয়ার দরকার নেই। 

৫। টাকা সঞ্চয় করার জন্য নির্দিষ্ট লক্ষ্য ঠিক করুন

নিজের মনে একটি লক্ষ্য ঠিক করতে হবে। আমি আগামী ৩ মাসের মধ্যে এত টাকা সঞ্চয় করার পরে আমি একটি মোবাইল কিনবো বা ক্যামেরা কিনবো অথবা কম্পিউটার কিনবো। এমন একটি লক্ষ্য ঠিক রেখে টাকা সঞ্চয় করতে হবে। 

এই ছোট ছোট লক্ষ্যের পাশাপাশি বড় লক্ষ্য ঠিক করতে হবে। আমি ৫ বছর পরে একটি বাড়ি কিনবো। গাড়ি কিনবো। তাহলে দেখবেন আপনি টাকা সঞ্চয় করতে পারছেন। 

আরো পড়ুন: যে ১২টি বই পড়লে জীবন বদলে যাবে

৬। বিনিয়োগ করুন

আপনি আপনার সঞ্চিত টাকা একটি এমন জায়গায় রাখবেন যেখান থেকে টাকা বৃদ্ধি পাবে। আজকে ১০০ টাকা জমালে ৫ বছর পরে সেই টাকা যেন ১০০ টাকাই না থাকে। আপনি টাকা সঞ্চয় করতে চাইলে অবশ্যই টাকা জামাবেন।

কিন্তু সেই টাকা কোন না কোন জায়গায় বিনিয়োগ করবেন। টাকা বিনিয়োগ না করলে টাকা বৃদ্ধি পায় না। কারণ টাকার ধর্ম হলো হাত বদল হওয়া। সেই টাকা যদি এক জায়গায় আটকে থাকে তাহলে টাকার মান কমে যায়। 

সঞ্চয় করা টাকা গুলো আপনি ব্যাংক এফডিআর করতে পারেন (Fixed Deposit Receipt), বন্ড কিনতে পারেন, সোনায় বিনিয়োগ করতে পারেন। 

৭। জরুরি তহবিল তৈরি করুন

টাকা সঞ্চয় করা মানে এমন নয় যে না খেয়ে, প্রয়োজন অনুযায়ী টাকা ব্যবহার না করে টাকা সঞ্চয় করতে হবে। টাকা মানুষের জিবন যাপন সহজ করে দেয়। তাই টাকা সঞ্চয় করতে হবে জরুরি মুহুর্তে যাতে নিজের টাকা দিয়ে সেই সমাধান করা যায়। এই জন্য ৩-৬ মাসের জন্য টাকা আলাদা একাউন্টে রাখুন। 

৮। কোন পন্য দ্রব্য কেনার আগে চিন্তা করতে হবে

টাকা সঞ্চয় করার উপায় গুলোর জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। একটি পন্য কেনার আগে আপনি যদি কিছু সময় নেন তাহলে বুঝতে পারবেন যে ঐ পণ্যটি আপনার জন্য কতটা প্রয়োজনীয়। দেখবেন আপনার মতামত পরিবর্তন হয়ে যাবে ২৪ ঘন্টা পরে। যার ফলে অপ্রয়োজনীয় পণ্য গুলো কেনার থেকে বিরত থাকতে পারবেন। 

টাকা সঞ্চয় করার উপায় গুলোর মধ্যে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ন একটি পয়েন্ট। 

৯। অতিরিক্ত আয়ের উৎস তৈরি করুন

টাকা সঞ্চয় করার জন্য শুধু কম খরচ করে টাকা জমাতে হবে তা কিন্তু নয়। আপনি তখনই বেশি টাকা সঞ্চয় করতে পারবেন যখন আপনার বেশি টাকা আয় হবে। এজন্য আপনার সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত আপনার আয় বাড়ানোর জন্য।

 আপনি যদি চাকুরী করেন তাহলে চাকুরীর করার পাশে ফ্রি সময়ে কি কাজ করতে পারবেন সেই অনুযায়ী কাজ গুলো বেছে নিয়ে নতুন কাজ করতে শুরু করুন। তাহলে দেখবেন যে মুল ইনকামের পাশে অতিরিক্ত টাকা আয় করার প্রতি বেশি জোড় দেবেন। তাহলে টাকা সঞ্চয় করতে পারবেন। 

১০। টাকা সঞ্চয় করার উপায় গুলোর মধ্যে শেষ পদক্ষেপ মাসিক খরচ পর্যালোচনা করুন

টাকা সঞ্চয় করার উপায় গুলোর মধ্যে এই ধাপটি অবশ্যই ফলো করুন। আপনি প্রতি মাসে একবার হিসাব করুন যে এই মাসে কত টাকা খরচ করেছেন। কোন খাতে কত টাকা খরচ করেছেন। এই হিসাবটি যদি আপনার কাছে থাকে তাহলে  আগামী মাসে কোন কোন খাতে কিভাবে খরচ করবেন তার একটি স্পষ্ট ধারণা পেয়ে যাবেন। 

আপনি তখন বুঝতে পারবেন টাকা কিভাবে সঞ্চয় করতে হয়। 

ব্যাংকে টাকা জমানোর নিয়ম

ব্যাংকে টাকা জামানোর জন্য আপনাকে প্রথমেই একটি ব্যাংক একাউন্ট খুলতে হবে। আপনি যদি মাসিক হিসাবে চাকুরীর বেতন পান। তাহলে আপনি অটো সেভিংস সিন্টেম করে রাখতে পারেন। যার ফলে একাউন্টে টাকা আসা মাত্রই একটি নির্দিষ্ট পরিমান টাকা আপনার সেভিংস একাউন্টে জমা হয়ে যাবে। 

আর যদি আপনার কাজের টাকা ক্যাশে পান তাহলে হাতে টাকা আসার সাথে সাথে সেই টাকা কোন বিলম্ব না করে ব্যাংকে জমা করতে হবে। এর ফলে আপনি টাকা সঞ্চয় করতে পারবেন।

টাকা কোথায় জমাবো?

টাকা অনেক জায়গায় জমানো যায়। ব্যাংকে টাকা জমানো যায়, সঞ্চয়পত্র কেনার মাধ্যমে টাকা সঞ্চয় করে টাকা জমানো যায়।

মানুষ কিভাবে টাকা সঞ্চয় করে?

মানুষ তার লক্ষ্য ঠিক করলেই তার টাকা সঞ্চয় করার প্রতি আগ্রহ বেড়ে যাবে। তার আয়ের থেকে ব্যয় কম করবে, অপ্রয়োজনীয় খরচগুলো কমিয়ে দিয়ে শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় খরচগুলো করবেন। প্রতিমাসে আয় ব্যয়ের একটি হিসাব করবেন তাহলে মানুষ টাকা সঞ্চয় করতে পারবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *