
নতুন ফ্রিজ কেনার আগে যে বিষয়গুলো দেখে নেবেন
ফ্রিজ বর্তমান সময়ে একটি সংসারে অতি প্রয়োজনীয় একটি জিনিস হয়ে উঠেছে। তাই ২০২৫ সালে একটি নতুন ফ্রিজ কেনার আগে যে বিষয় গুলো আপনার অবশ্যই জানা উচিত তা নিচে দেওয়া হলো।
১. কম্প্রেসার চেক

একটি ফ্রিজের মুল অংশই হলো কম্প্রেসার। ফ্রিজের কম্প্রেসার যত ভালো হবে আপনার ফ্রিজ তত ভালো হবে। তাই একটি ফ্রিজ কেনার আগে কম্প্রেসার অবশ্যই চেক করতে হবে।
এখন কথা হলো কিভাবে বুঝতে পারবেন কোন কম্প্রেসারটি ভালো। এর জন্য আপনাকে যেদিকটি খেয়াল করতে হবে তা হলো কম্প্রেসারের ভিতরের কয়েলটি কোন ধরনের। প্রধানত দুই ধরনের কয়েল থেকে থাকে কম্প্রেসারের মাঝে।
- তামার কয়েল/ কপার কন্ডেসার
- অ্যানুমিলিয়াম কয়েল
আপনার নিশ্চিত হতে হবে আপনি যে ফ্রিজটি কিনছেন সেটিতে কি তামার কয়েল/কপার কন্ডেন্সার আছে কি না। কারণ অ্যানুমিলিয়ামের কয়েলের কম্প্রেসার গুলো বেশিদিন ভালো থাকে না। যে কোন সময় নষ্ট হয়ে যায়।
কিন্তু একটি তামার কয়েলের কম্প্রেসার ৫ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত ভালো থাকে কোন সমস্যা হয় না।
২. ফ্রিজের আকার অনুযায়ী বা ধারন ক্ষমতা অনুযায়ী ফ্রিজ নির্বাচন

ফ্রিজের ধরন | ধারণ ক্ষমতা | যাদের জন্য উপযোগী | মন্তব্য |
সিঙ্গেল ডোর | ১২০ থেকে ১৩০ লি. | ১ থেকে ৩ জন মানুষের | ছোট পরিবার অথবা ব্যাচেলরদের জন্য উপযোগী হলো সিঙ্গল ডোর ফ্রিজ। |
ডাবল ডোর | ৩০০ থেকে ৫০০ লি. | ৩ থেকে ৬ জন মানুষের | এই ধরনের ফ্রিজ একটি মাঝারি পরিবারের জন্য আদর্শ ফ্রিজ। |
ট্রিপল ডোর | ২৪০ থেকে ৩৫০ লি. | ৩ থেকে ৫ জন মানুষের | বিভিন্ন ধরনের জিনিস আলাদা করে রাখার জন্য উপযোগী একটি ফ্রিজ। |
সাইড বাই সাইড ডোর | ৫০০ লি. | ৫ জনের বেশি মানুষের | পর্যাপ্ত জায়গা, একাধিক সেকশন, সবজি রাখার জায়গা, ওয়াই-ফাই এবং অন্যান্য প্রযুক্তির সুবিধা। |
৩. ফ্রিজ কেনার আগে ফ্রিজে কোন ধরনের গ্যাস তা দেখে নিতে হবে

নতুন ফ্রিজ কেনার আগে আরো যা জেনে নিতে হবে তা হলো ফ্রিজটিতে কোন ধরনের গ্যাস রয়েছে। বাজারে প্রচলিত ফ্রিজ গুলোর মধ্যে প্রধানত তিন ধরনে গ্যাস থাকে। যেমন
- R-12
- R 134a
- R-600a
উপরোক্ত গ্যাস গুলোর মধ্যে সবচেয়ে R-600a গ্যাস ভালো। এই গ্যাসটি অন্য দুই গ্যাসের চেয়ে পাতলা। যার কারণে সহজেই ফ্রিজের সবজায়গায় ছড়িয়ে পরে। তাই আপনি একটি নতুন ফ্রিজ কিনতে চাইলে অবশ্যই দেখে নিবেন ফ্রিজটিতে কোন গ্যাস রয়েছে।
৪. ফ্রিজ কেনার আগে কন্ডেন্সার পাইপ কিসের তৈরি তা দেখে নিতে হবে

কম্প্রেসার থেকে যে পাইপ গুলো বের হয়েছে তা কোন ধরনের পাইপ সেটা দেখতে হবে। পাইপ গুলো কপার কন্ডেসার নাকি অ্যানুমিলিয়ামের তৈরি। কম্প্রেসার কয়েল এর মতো এটাও দেখবেন যাতে কপার বা তামার পাইপ থাকে। অ্যানুমিলিয়ামের পাইপ থাকলে তা বেশিদিন ভালো থাকে না। কপার পাইপ থাকলে অনেকদিন ভালো থাকে।
যার কারনে আপনি একটি নতুন ফ্রিজ কেনার আগে কন্ডেন্সার পাইপ কি দিয়ে তৈরি তা চেক করে নিবেন।
৫. ফ্রস্ট নাকি নন-ফ্রস্ট সেটাও দেখে নিতে হবে

আপনি যে ফ্রিজটি কিনছেন সেটা কি ফ্রস্ট নাকি নন-ফ্রস্ট তা জেনে দেখে নিবেন।
ফ্রস্ট: ফ্রস্ট ফ্রিজ হলো যে ফ্রিজ গুলোতে বরফ জমে থাকে সেগুলো হলো ফ্রস্ট ফ্রিজ।
নন ফ্রস্ট: নন-ফ্রস্ট ফ্রিজ হলো যে ফ্রিজ গুলোতে কোন বরফ জমে না তাকে নন ফ্রস্ট ফ্রিজ বলে।
আপনি যদি গ্রামে বসবাস করে থাকেন কিংবা আপনার এলাকায় যদি লোড সেডিং এর সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে ফ্রস্ট ফ্রিজ কিনবেন। কারণ ফ্রস্ট ফ্রিজে বরফ জমে থাকে যার ফলে বিদ্যুৎ চলে গেলেও ২ থেকে ৩ ঘন্টা খাবার ভালো থাকে।
আর যদি আপনার এলাকায় বিদ্যুৎ এর লোডসেডিং সমস্যা না হয়ে থাকে তাহলে আপনি নন ফ্রস্ট ফিজ কিনতে পারেন। নন ফ্রস্ট ফ্রিজ গুলোতে যেহেতু বরফ জমে থাকে না তাই এগুলো ঘন ঘন পরিষ্কার করার প্রয়োজন হয় না। খারাব থাকে সতেজ।
৬. বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী কি না তা নিশ্চিত হতে হবে?
আপনি নতুন ফ্রিজ কেনার আগে দেখে নিবেন আপনার ফ্রিজটি কি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী কি না। কারণ ফ্রিজটি যদি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী না হয় তাহলে আপনার প্রতি মাসে যে পরিমান বিদ্যুৎ বিল আসবে তা দেওয়া অনেক কষ্ট হয়ে যাবে। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ফ্রিজ হলে আপনার বিদ্যুৎ খরচ কমাবে। তাছাড়া বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ফ্রি পরিবেশ বান্ধব।
যেভাবে বুঝবেন আপনার ফ্রিজটি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী তা হলো ফ্রিজের গায়ে যদি একটি নির্দিষ্ট জায়গায় স্টার চিহ্ন দেওয়া থাকে, তাহলে বুঝতে হবে ফ্রিজটি বিদ্যুৎ-সাশ্রয়ী ।
৭. ন্যানো হেলথ কেয়ার টেকনোলজি বা ইনডোর প্লাস্টিক চেক
আগে একজন মানুষ ফ্রিজ কেনা এবং ফ্রিজে কিছু রাখতে পারলেই খুশি হয়ে যেত। কিন্তু বর্তমানে আর তেমন নেই। বর্তমানে নতুন নতুন টেকনোলজি আসার ফলে মানুষ তার স্বাস্থ্য সচেতনতার দিকে নজর দিয়েছে বেশি।
বাজারে যে ফ্রিজ গুলো পাওয়া যায় তার মধ্যে এক ধরনের প্লাস্টিক আছে যেগুলো স্বাস্থ্যকর নয়। সেগুলো কমদামি প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি। যার ফলে খাবারে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
তাছাড়া আরেক ধরনের প্লাস্টিক আছে যা ন্যানো হেলথ কেয়ার টেকনোলজি। এই প্রযুক্তির প্লাস্টিক ফ্রিজে থাকলে খাবার বা সবজি থাকে সতেজ। কোন প্রকার দুর্গন্ধ ছড়ায় না খাবার দিয়ে। তাই আপনি নতুন ফ্রিজ কেনার আগে এই বিষয়টি অবশ্যই দেখে নিবেন।
৮. ইনভার্টার নাকি নন ইনভার্টার
বাজারে দুই ধরনের ফ্রিজ পাওয়া যায়। ইনভার্টার এবং নন ইনভার্টার ফ্রিজ। ইনভার্টার ফ্রিজ গুলো বিদ্যুৎ খরচ কম হয়। কিন্তু নন ইনভার্টার ফ্রিজের ক্ষেত্রে একটু বিদ্যুৎ বিল বেশি হয়।
এখানে একটি বিষয় হলো যে এলাকায় বিদ্যুৎ এর লোড সেডিং বেশি হয় সেই এলাকার জন্য ফ্রস্ট ফ্রিজ এবং নন ইনভার্টার এর ফ্রিজ কিনতে পারেন। যে এলাকায় কম লোড সেডিং হয় সেখানে নন ফ্রস্ট ফ্রিজ এবং ইনভার্টার ফ্রিজ কিনতে পারেন।
আরো পড়ুন: ক্যামেরা কেনার আগে পুরাতন ক্যামেরা কিনব নাকি নতুন ক্যামেরা?
৯. এনার্জি লেবেল চেক করুন ফ্রিজ কেনার আগে
একটি ফ্রিজে ১ থেকে ৫ পর্যন্ত এনার্জি লেভেল থাকে। আপনি দেখবেন ফ্রিজে এনার্জি লেবেল কত। কমপক্ষে ৩ থেকে ৫ এর মধ্যে থাকতে হবে। যেত বেশি এনার্জি লেবেল থাকবে তত বেশি ভালো হবে এবং বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ও তত বেশি হবে। একটি নতুন ফ্রিজ কেনার আগে এনার্জি লেবেল অবশ্যই দেখে নিতে হবে।
১০. ডিপ উপরে নাকি নিচে
আপনারা দেখে থাকবেন বাজারে দুই ধরনের ফ্রিজ রয়েছে। এক ধরনের ফ্রিজে উপরে ডিপ থাকে এবং আরেক ধরনের ফ্রিজে নিচে ডিপ থাকে। এখন কথা হলো আপনি উপরের ডিপ ওয়ালা ফ্রিজ কিনবেন নাকি নিচে ডিপ ওয়ালা ফ্রিজ কিনবেন। এক্ষেত্রে ফ্রিজের সার্ভিস এর কোন পার্থক্য হয় না।
যে সমস্যাটি হয়ে থাকে সেটা হলো যদি ডিপ উপরে থাকে তাহলে একটি ঝুকি থাকে যে ফ্রিজ খোলার সময় কখনও যদি আটকে যায় এবং জোড়ে খোলা হয় তখন সামনে পরে যেতে পারে। কিন্তু নিচে ডিপ থাকলে এই সমস্যাটি কম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই আপনি নিচে ডিপ আছে এমন একটি ফ্রিজ নির্বাচন করতে পারেন।
১১. জালি সিন্টেম নাকি ডয়ার সিস্টেম
ফ্রিজের মাঝের তাক গুলো কেমন সিস্টেম তা দেখে নিবেন। দুই ধরনে তাক ওয়ালা ফ্রিজ পাওয়া যায় বাজারে।
- জালি সিস্টেম
- ডয়ার সিস্টেম
এখানে জালি সিস্টেম তাকের থেকে ডয়ার সিস্টেম গুলো ভালো। কারণ জালি সিস্টেম হলে ফ্রিজের দরজা খুললেই সব তাক একসাথে খুলে যায়। তারপর একটি খাবারের গন্ধ অন্য খাবারের সাথে মিশে যায়। যার কারণে জালি সিস্টেম ভালো নয়।
ডয়ার সিস্টেম ফ্রিজ গুলো ভালো। এই ধরনের ফ্রিজের দরজা খুললেও সকল তাকের পন্য গুলোতে বাইরের বাতাস লাগে না। একটির গন্ধ আরেকটির সাথে মিশে যায় না। খাবার থাকে সতেজ। তাই নতুন ফ্রিজ কেনার সময় খেয়াল রাখবেন যাতে আপনার ফ্রিজে ডয়ার সিস্টেম তাক গুলো থাকে।
১২. ব্রান্ড/ কোম্পানি নির্বাচন
ফ্রিজ এমন একটি পন্য যা একজন মানুষ প্রতিদিন ক্রয় করে না। একবার ক্রয় করে অনেক দিন ব্যবহার করে থাকে। তাই যে কোম্পানি গুলো ভালো সার্ভিস দিয়ে থাকে তাদের ফ্রিজ কিনবেন। এমন একটি ফ্রিজ কিনবেন যার সার্ভিস সারা দেশে রয়েছে। যেমন: এলজি, স্যামস্যাং, ওয়াল্টন, ইত্যাদি।
১৩. ওয়ারেন্টি, গ্যারান্টির সুবিধা
বাজারে যেসকল ফ্রিজ আছে তাদের মধ্যে সবথেকে কোন কোম্পানি ওয়ারেন্টি এবং গ্যারান্টি বেশি দেয় সেগুলো দেখে কিনতে হবে। এক্ষেত্রে একটি বিষয় সতর্ক থাকতে হবে যে অনেক কোম্পানি আছে নতুন তাদের কোন ভরসা নেই তারা সকল কোম্পানির থেকে বেশি গ্যারান্টি এবং ওয়ারেন্টি দিচ্ছে তবুও তাদের পন্য কেনা থেকে বিরত থাকাই ভালো হবে।
১৪. বাজেট
নতুন ফ্রিজ কেনার আগে বাজেট একটি বড় বিষয়। এমন একটি ফ্রিজ কিনে ফেললেন যে তার সাথে আর সামান্য কিছু টাকা যোগ করলে আরো ভালো মানের একটি ফ্রিজ পাওয়া যেত। তাই একটি ফ্রিজ কেনার আগে আপনার বাজেট অনুযায়ী বা তার থেকে একটু বেশি দামের ফ্রিজ গুলো ও দেখতে হবে।
আমাদের ফেসবুক পেইজ: তোয়ান